বিশ্বের বৃহত্তম ফুলের গাছ র‍্যাফ্লেসিয়া অবলুপ্তির পথে

বিশ্বের বৃহত্তম ফুলের গাছ র‍্যাফ্লেসিয়া অবলুপ্তির পথে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক গার্ডেনের উদ্ভিদবিদ সহ একদল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী, বিশ্বের বৃহত্তম ফুল ধারণকারী উদ্ভিদ র‍্যাফ্লেসিয়াকে বাঁচাতে সকলের সমন্বিত পদক্ষেপের জন্য জরুরি আহ্বান জানিয়েছেন। একটা নতুন সমীক্ষা অনুসরণ করে দেখা গেছে যে র‍্যাফ্লেসিয়ার ৪২ টা প্রজাতির মধ্যে বেশিরভাগই মারাত্মকভাবে বিপন্নতার সম্মুখীন হলেও এর মধ্যে শুধুমাত্র একটা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (IUCN) এর বিপন্ন প্রজাতির লাল তালিকাযর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই উদ্ভিদের আবাসস্থলের দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি প্রায় ৬৭% অরক্ষিত এবং ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
র‍্যাফ্লেসিয়া, উদ্ভিদের সবচেয়ে বড়ো রহস্যের মধ্যে একটা, বহু শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহল জাগিয়েছে। এই পরজীবী উদ্ভিদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার (ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ড) জঙ্গলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় লতাগুলিকে সংক্রামিত করে। এর বেশিরভাগ জীবনচক্রে, র‍্যাফ্লেসিয়া দৃষ্টির আড়ালে থাকে,এটা সুতোর মতো একটা ফিলামেন্ট হিসাবে বিদ্যমান যা দিয়ে এর হোস্ট উদ্ভিদকে আক্রমণ করে। অপ্রত্যাশিতভাবে সময়ের ব্যবধানে, এই পরজীবী উদ্ভিদ বাঁধাকপির মতো একটি কুঁড়ি তৈরি করে যা লতার ছাল ভেঙ্গে এক মিটার জুড়ে একটি বিশাল, পাঁচ-পাপড়িযুক্ত ফুল তৈরি করে। এটি পরাগায়নকারী মাছিদের আকৃষ্ট করার জন্য পচা মাংসের একটি বিশ্রী গন্ধ উৎপন্ন করে, তাই এর বিকল্প নাম ‘মৃতদেহ ফুল’। র‌্যাফ্লেসিয়া সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা কম এর নতুন প্রজাতি এখনও রেকর্ড করা হচ্ছে। এই অনন্য উদ্ভিদের বিপন্নতা ভালোভাবে বোঝার জন্য, বিজ্ঞানীদের একটি দল র‍্যাফ্লেসিয়ার হুমকিগুলি মূল্যায়ন করার জন্য প্রথম সমন্বিত বিশ্ব নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছেন। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যে ৪২ টা র‍্যাফ্লেসিয়া প্রজাতি বিপন্ন: IUCN দ্বারা ব্যবহৃত মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে, বিজ্ঞানীরা ২৫ টাকে ‘মারাত্মক বিপন্ন’, ১৫ টাকে ‘বিপন্ন’ এবং দুটোকে দুর্বল হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন। রাফলেসিয়া প্রজাতির প্রায়শই অত্যন্ত সীমাবদ্ধ স্থানে থাকে, ফলে তাদের আবাসস্থল ধ্বংস তাদের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ । সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অবশিষ্ট কিছু র‍্যাফ্লেসিয়া বিভিন্ন অঞ্চল কৃষিজমিতে রূপান্তরের জন্য অরক্ষিত এলাকায় মাত্র কয়েকটা এই উদ্ভিড রয়েছে। বোটানিক গার্ডেনে র‍্যাফ্লেসিয়া বাঁচানোর প্রচারের প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত সীমিত সাফল্য পেয়েছে, এরা এখন বাসস্থান সংরক্ষণকে জরুরি অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
র‍্যাফ্লেসিয়ার জন্য যে চারটে ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে তা হল, এদের বাসস্থান সংরক্ষণ, এদের বৈচিত্র্য বোঝা যাতে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়, অন্যান্য স্থানে এই উদ্ভিদ ছড়িয়ে দেওয়া, স্থানীয় মানুষের মধ্যে এর প্রচার করা ও ভ্রমণার্থীদের এটা দেখানো ও সচেতন করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + thirteen =