বন্য হাতিদের ধাঁধা সমাধানের অসাধারণ দক্ষতা

বন্য হাতিদের ধাঁধা সমাধানের অসাধারণ দক্ষতা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ অক্টোবর, ২০২৩

যে কোনো প্রজাতির মধ্যে স্বতন্ত্র উদ্ভাবনী শক্তিকে বুদ্ধিমত্তার একটি চিহ্ন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে দেখেছেন যে হাতিরা সমস্যা সমাধানের জন্য বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন পদ্ধতির অবলম্বন করে। অ্যানিমল বিহেভিয়ার জার্নালে এক সদ্য প্রকাশিত গবেষণায় গবেষকরা ছ মাস-ব্যাপী গবেষণার ফলাফলের বিবরণ দিয়েছেন যেখানে খাবার বোঝাই বাক্সগুলো খুলতে পারলে তবেই হাতিরা খাবারের নাগাল পাবে। গবেষণায় এশীয়া মহাদেশের বন্য হাতির দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার মাত্রা নথিভুক্ত করা হয়। কানি গ্র্যাজুয়েট সেন্টার এবং হান্টার-এর মনোবিজ্ঞানী সারাহ জ্যাকবসন বলেন যে এই প্রথম গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে খাদ্য পাওয়ার জন্য একটি বন্য হাতির সমস্যা সমাধানের ইচ্ছা এবং ক্ষমতা বা প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে, এবং তা একটি হাতির থেকে অন্য হাতির ক্ষেত্রেও আলাদা। এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কীভাবে প্রাণীরা চিন্তা করে এবং উদ্ভাবন করে তা এই দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। আর এই পরিবেশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের হস্তক্ষেপেই পরিবর্তন হচ্ছে।
থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরিতে সালাকপ্রা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে পরিচালিত এই গবেষণায় মোশন-অ্যাক্টিভেটেড ক্যামেরা ব্যবহার করে ৭৭ টি বন্য এশীয় হাতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে যারা তিন ধরনের কম্পার্টমেন্টযুক্ত পাজেল বক্সের কাছে এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা বাক্সটি খুলবে কিনা। বাক্সতে খাবার হিসেবে সুগন্ধযুক্ত কাঁঠাল রাখা হয়েছিল। একটি পাজেল বক্সের উপরের দিকে একটি পুশ দরজা রয়েছে যা ভিতরের দিকে ঠেলে খুলতে হয়, মাঝখানের বাক্সের দরজাটা হাতি নিজের দিকে টেনে খুলতে পারবে এবং নীচের দরজাটা ডানদিকে স্লাইড করে খোলে। সময়ের সাথে সাথে, পাজেল বাক্সের কাছে আসা হাতিদের মধ্যে ৪৪ টি হাতি তাদের শুঁড়ের সাহায্যে পাজেল বক্স খুলতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু হাতিদের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতার পার্থক্য ছিল। গবেষকরা দেখেছেন, যে সব হাতিরা বারে বারে পাজেল বক্সের কাছে এসে বাক্স খোলার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে তারা এই তিন ধরনের বাক্স থেকেই খাবার পুনরুদ্ধার করতে বেশি সফল হয়েছিল। সামগ্রিকভাবে, ১১টি হাতি এক ধরনের বাক্স খুলতে পেরেছে, ৮টি হাতি দু ধরনের বাক্স খুলতে সক্ষম হয়েছে এবং ৫টি হাতি তিন ধরনেরই বাক্স খোলার সমস্যা সমাধান করতে পেরেছে এবং তারাই সবচেয়ে উদ্ভাবনীশক্তি সম্পন্ন ছিল। গবেষকদের মতে প্রাকৃতিক আবাসস্থল হারানো এবং বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষিকার্যের ফলে মানুষ ও হাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। হাতিদের মধ্যে উদ্ভাবনী শক্তি এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা নিজেরা বন্য হাতির বৌদ্ধিক দক্ষতা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হব এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও মানব-হাতি সংঘর্ষ প্রশমনে সচেষ্ট হব। গবেষকরা এই কথাই মনে করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − 6 =