পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে – মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে – মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ অক্টোবর, ২০২৩

পরিবেশে তাপ এবং আদ্রতার মাত্রা মানুষের শরীরে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হিট স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক ঘটাতে পারে। বিশ্বজুড়ে আজ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর তাই কোটি কোটি মানুষ আজ আক্রান্ত হচ্ছে। শিল্প বিপ্লব শুরুর পর থেকে, মানুষ যন্ত্র ও কারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াতে শুরু করে। ফলত সারা বিশ্বে তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধি পায়। ২০১৫ সালে, ১৯৬টি দেশ প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল যার লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প স্তরের উপরে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা। পেন স্টেট গবেষক কতৃক গত বছর প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, একটি অল্পবয়সী সুস্থ মানুষের জন্য পরিবেষ্টিত তাপমাত্রার সীমা প্রায় ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১০০% আর্দ্রতায় ৮৭.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের সমান। তবে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা ছাড়াও, একটি নির্দিষ্ট মুহুর্তে যে কোনও ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট সহনশীলতার মান বা থ্রেশহোল্ড ভ্যালু তাদের পরিশ্রম, বায়ুর গতি এবং সৌর বিকিরণ সহ অন্যান্য পরিবেশগত কারণের উপর নির্ভর করে। গবেষকদের মতে, মানব ইতিহাসে, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা মানুষের সহ্যের সীমা কয়েকবার এবং শুধুমাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য অতিক্রম করেছিল। সমীক্ষার ফলাফল থেকে উঠে এসেছে যে যদি বিশ্বের তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তবে পাকিস্তান এবং ভারতের সিন্ধু নদী উপত্যকার ২.২ বিলিয়ন বাসিন্দা, পূর্ব চীনে বসবাসকারী এক বিলিয়ন মানুষ এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার ৮০০ মিলিয়ন বাসিন্দা প্রতি বছরে অনেক ঘন্টার জন্য তাপ অনুভব করবে যা মানুষের সহনশীলতাকে ছাড়িয়ে যাবে। এই অঞ্চলগুলো প্রাথমিকভাবে উচ্চ-আর্দ্রতাসহ তাপপ্রবাহ অনুভব করবে। উচ্চ আর্দ্রতা সহ তাপপ্রবাহ আরও বিপজ্জনক হতে পারে কারণ বায়ু অতিরিক্ত আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে না। উদ্বেগজনকভাবে, গবেষকরা বলেছেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো এই অঞ্চলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, তাই ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেরই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ বা তাপের নেতিবাচক স্বাস্থ্যের প্রভাব প্রশমিত করার কোনও কার্যকর উপায় নাও থাকতে পারে। যদি পৃথিবীর উষ্ণতা প্রাক-শিল্প স্তর থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠতে থাকে তবে তাপ এবং আর্দ্রতার মাত্রা মানুষের সহনশীলতাকে ছাড়িয়ে যাবে এবং তা ইস্টার্ন সিবোর্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যভাগকে প্রভাবিত করতে শুরু করবে। দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াও চরম তাপ অনুভব করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও তাপপ্রবাহ অনুভব করবে, তবে এই তাপপ্রবাহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো প্রায়শই মানুষের সীমা অতিক্রম করবে বলে গবেষকরা মনে করছেন না। উচ্চতর তাপমাত্রায় উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে মানুষ ঘামে, এবং তাদের ত্বকে আরও রক্ত সঞ্চালিত হয় যাতে বাইরের পরিবেশের কাছে তারা সেই তাপ বের করে দিয়ে শরীরের কেন্দ্রস্থলের তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত উষ্ণ এবং আদ্র আবহাওয়ায় এই সমন্বয়গুলো আর সম্ভব নয়, এবং শরীরের মূল তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। যদি ব্যক্তিটি কয়েক ঘন্টার মধ্যে নিজের শরীরকে ঠাণ্ডা করতে না পারে সে ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ক্লান্তি, হিট স্ট্রোক এবং হৃদযন্ত্রে চাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং দুর্বল ব্যক্তিদের হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।
গবেষকদের অনুমান বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য সরকারী কৌশলগুলো শুধুমাত্র তাপমাত্রার উপর নজর দেয় কিন্তু এই গবেষণাটি দেখায় যে আর্দ্র তাপ শুষ্ক তাপের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকারক। তারা আরও বলেন যে তীব্র তাপপ্রবাহ সেই অঞ্চলে ঘটবে যেখানে বসবাসকারী মানুষেরা ধনী নয় এবং যে অঞ্চলগুলোতে আগামী দশকে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি হতে পারে। এই দেশগুলো ধনী দেশের তুলনায় অনেক কম গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন ও নির্গমন করলেও কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এবং অনেকে মারাও যেতে পারে। তবে ধনী দেশেও এই তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়বে এবং এই বিশ্বে, প্রত্যেকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে।