শিশুরা তাদের বাবামায়ের কাছাকাছি থাকলে ভবিষ্যতে সহানুভূতিশীল, সহায়ক এবং ‘সামাজিক’ হয়ে ওঠে

শিশুরা তাদের বাবামায়ের কাছাকাছি থাকলে ভবিষ্যতে সহানুভূতিশীল, সহায়ক এবং ‘সামাজিক’ হয়ে ওঠে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৫ অক্টোবর, ২০২৩

শৈশবাবস্থায় বা জীবনের প্রথম দিকে বাবামায়ের এবং সন্তানদের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন শিশুর ‘সামাজিক’ হওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে এবং অন্যদের প্রতি দয়া ও সহানুভূতিশীল করে তোলে- এমন কথাই বলছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক এই গবেষণায় ২০০০ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী ১০,০০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে যাতে বাবামায়ের সাথে শিশুদের প্রাথমিক সম্পর্ক, সামাজিকতা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক অনুধাবন করা যায়। শৈশব এবং কৈশোর জুড়ে এই বৈশিষ্ট্যগুলো কীভাবে কাজ করে তা দেখার জন্য এটি প্রথম একটি গবেষণা। গবেষকরা দেখেছেন যে যারা তিন বছর বয়সে তাদের বাবামায়ের থেকে ভালোবাসা ও স্নেহ পেয়েছে তাদের মধ্যে শৈশব এবং বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা কম দেখা গেছে, বরং উচ্চতর ‘সামাজিক’ প্রবণতাও লক্ষ্য করা গেছে, যেমন অন্যদের উপকার করা, দয়াপরবশ হয়ে কাজ করা, উদার বা সহানুভূ্তিশীল হওয়া, অন্যকে সাহায্য করা, স্বেচ্ছাসেবী মনোভাব প্রভৃতি। অন্যদিকে, যেসব শিশুর শৈশবে, তাদের বাবামায়ের সঙ্গে সম্পর্ক মানসিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ বা খারাপ বা অবমাননাকর ছিল তাদের ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে সামাজিক দক্ষতা কম গড়ে উঠেছে। গবেষকরা বলেছেন যে এমন অনেক পরিস্তিতি রয়েছে যেখানে পিতামাতা-সন্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করা সবসময় সহজসাধ্য নাও হতে পারে; উদাহরণস্বরূপ, যদি বাবা-মা আর্থিক এবং কাজের চাপের সাথে সর্বদা লড়াই করে অনেকসময় তারা সন্তানদের খুব বেশি সময় দিতে পারে না। গবেষণায় আরও অন্বেষণ করা হয়েছে যে তরুণতরুণীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক আচরণ নির্দিষ্ট ‘বৈশিষ্ট্য’ হয়ে উঠতে পেরেছে কিনা, এবং পরিস্থিতি অনুসারে যেমন বিদ্যালয়ে বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তা কতটা পরিবর্তিত হতে পারে। গবেষণায় ৫, ৭, ১১, ১৪ এবং ১৭ বছর বয়সে মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিকতা উভয়ই পরিমাপ করা হয়েছে যাতে এই বৈশিষ্ট্য কীভাবে গঠিত হয় এবং কীভাবে তারা একে অপরের উপর নির্ভর করে তার একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। গবেষকরা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে, যেকোনো ব্যক্তি মানসিকভাবে ভালো থাকে, বা মানসিকভাবে অসুস্থ থাকে এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে একটা সহনশীল মনোভাব অর্জন করে। ব্যক্তির পরিবেশের উপর নির্ভর করে সামাজিকতা দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিবর্তিত হয়। এবং এটি প্রভাবিত হয় ব্যক্তির পিতামাতার সাথে তার প্রাথমিক সম্পর্ক দ্বারা। শিশু হিসেবে, আমরা পিতামাতার সাথে আমাদের সম্পর্কের সেই দিকগুলোকে গ্রহণ করি যা আবেগ, যত্ন এবং উষ্ণতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং যা প্রতিফলিত হয় ভবিষ্যতে আমাদের আচরণের মাধ্যমে। আমরা অন্যদের প্রতি সদয় এবং সহায়ক হয়ে উঠি। গবেষণাটি পিতামাতা এবং শিশুদের মধ্যে শক্তিশালী প্রাথমিক সম্পর্ক গড়ে তোলার গুরুত্বকে নির্দেশ করে, যা অন্যান্য ক্ষেত্রে শিশুদের স্বাস্থ্যকর বিকাশকে ত্বরাণ্বিত করে। গবেষকদের মতে বাবামায়েরা তাদের বাচ্চাদের সাথে কতটা সময় কাটাতে পারে এবং জীবনের প্রথম দিকে তাদের চাহিদা এবং আবেগের প্রতি কতটা সাড়া দিতে পারে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর অনেকটাই বাবা-মায়ের কাছে পরবর্তী ক্ষেত্রে ফিরে আসে। অনেক ক্ষেত্রেই শিশুদের শেখার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে, তাই তাদের সময় দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘনিষ্ঠতা সময়ের সাথে সাথে তৈরি হয় এবং যে বাবা-মায়েরা চাপের মধ্যে এবং সীমাবদ্ধ পরিস্থিতিতে বসবাস করছেন বা কাজ করছেন তাদের জন্য প্রায়শই এই সময় থাকে না।