সাহারা মরুভূমিতে প্রাচীন সভ্যতা একটি জলাশয় কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল

সাহারা মরুভূমিতে প্রাচীন সভ্যতা একটি জলাশয় কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ অক্টোবর, ২০২৩

একটি প্রাচীন সমাজ যাদের বাড়ি ছিল সাহারা মরুভূমিতে তারা প্রায় এক সহস্রাব্দ ধরে নিয়মিত বর্ষা বা নদীর জল ছাড়াই বেঁচে ছিল। বিস্মৃত সভ্যতা রোমানদের কাছে গারমান্টেস নামে পরিচিত ছিল এবং এটিই প্রথম নগরীকৃত সমাজ যা মরুভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মরুভূমিতে অবস্থান হওয়া সত্ত্বেও, এখানকার লোকেরা কেবল বেঁচেই থাকেনি, জলের প্রতিটি ফোঁটা বালির নীচে থেকে নিংড়ে নিয়ে তারা সমৃদ্ধ হয়েছিল। সাব-সাহারান আফ্রিকার ক্রীতদাসদের দিয়ে টানেল নির্মাণ করে এবং ভূগর্ভস্থ জল সংগ্রহ করে, “বালির রাজ্যের মুক্ত বাসিন্দারা এমন জীবনযাত্রার মান অর্জন করেছিল যা বিশেষজ্ঞদের মতে এই অঞ্চলে অতুলনীয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং বোলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলেছেন এই অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টার সাথে ভাগ্যও জড়িত ছিল।
সাম্প্রতিক গবেষণাটি অতীতের প্রত্নতাত্ত্বিক অধ্যয়ন এবং হাইড্রোলজিকাল বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এবং অক্টোবরে আমেরিকার জিওলজিক্যাল সোসাইটি ‘কানেক্টস’ সম্মেলনে ফলাফলগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রাচীন ইতিহাসবিদদের দৃষ্টিতে, গারমান্টেসরা ছিল মরুভূমির বর্বরদের নিয়ে গঠিত একটি জাতি। ১৮০০০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি অঞ্চল জুড়ে ৪০০০ লোক বসবাস করত। এখানে বসবাস স্থাপনের জন্য একটি বিশাল ভূগর্ভস্থ বেলেপাথরের জলাশয় ছিল যা বিশ্বের বৃহত্তম হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। মাটির নীচের জল পাওয়ার জন্য, গারমান্টেস সমাজ দাসদের দিয়ে ৭৫০ কিলোমিটার উল্লম্ব খাদ এবং ভূগর্ভস্থ টানেল খনন করায়, যার নাম ফোগারাস, যা জলের টেবিলের ঠিক নীচে ছিল, যার ভিতর দিয়ে জল নীচের দিকে চলে যেত। তাদের জলাশয়ের প্রবাহ ব্যবস্থায় মাটির গভীর থেকে পাহাড়ের তলদেশে জল যেত, যেখানে ৫০০ টিরও বেশি ফোগারা তৈরি করা হয়েছিল, যার কোনো কোনোটা দৈর্ঘ্যে ৪.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত, সামান্য বৃষ্টিপাতও সিস্টেমটিকে রিচার্জ করতে সাহায্য করেছিল। এটি গারমান্টেস সভ্যতাকে প্রায় এক শতাব্দী ধরে সেচচাষ করে ফসলে ফলাতে দিয়েছিল। কিন্তু ধীরেধীরে জলের স্তর নেমে গেল, জলের জন্য আরও অনেক টানেল তৈরি করতে হত যাতে অনেক ক্রীতদাস প্রয়োজন ছিল। ইতিমধ্যে খাদ্য ও পানীয়ের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল, তাই ব্যবসা করে বা যুদ্ধের মাধ্যমে ক্রীতদাস অর্জন করা সম্ভব হয়নি। ফলে শেষে এই সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেল। গবেষকদের মতে এত বছর আগের গারমান্টেসদের পরিণতি আজ আমাদের জন্য সতর্কবার্তা। বিশ্বের অনেক অংশে, মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জলের টেবিল সংকুচিত হচ্ছে। জল সম্পদ চিরকাল স্থায়ী হবে না। ভবিষ্যতে পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে এই পরিণতি হওয়া সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − eight =