লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে ‘ক্রোধ’ কতটা কার্যকরী হাতিয়ার

লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে ‘ক্রোধ’ কতটা কার্যকরী হাতিয়ার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৩ নভেম্বর, ২০২৩

আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, রাগ প্রায়শই একটি নেতিবাচক আবেগ হিসাবে অনুভূত হলেও, মানুষের জীবনে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাগ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। টেক্সাস এএন্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হেদার লেঞ্চের মতে মানুষ প্রায়শই বিশ্বাস করে যে সুখে থাকাই জীবনের আদর্শ, এবং বেশিরভাগ মানুষ সুখের অন্বেষণকে জীবনের একটি প্রধান লক্ষ্য বলে মনে করে। মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য ইতিবাচক আবেগ আদর্শ বলে মনে করা হলেও পূর্ববর্তী গবেষণা অনুসারে রাগের মতো অন্যান্য নেতিবাচক আবেগের মিশ্রণে সেরা ফলাফল লাভ করা যায়। বিগত কয়েক দশক ধরে অধ্যয়ন করা আবেগের তত্ত্ব অনুযায়ী সমস্ত ধরনের আবেগ- ভালো বা খারাপ, একজন ব্যক্তির পরিবেশের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিক্রিয়া এবং লেঞ্চের মতে, সেই ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে কাজ করে। প্রতিটি আবেগ একটি ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায় যেমন দুঃখ ইঙ্গিত দেয় যে একজন ব্যক্তির সাহায্য বা মানসিক সহায়তা প্রয়োজন আবার রাগ হলে বোঝা যায় যে ব্যক্তিটিকে জীবনের বাধা অতিক্রম করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
কোনো লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে ক্রোধের ভূমিকাকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য, গবেষকরা ১০০০-এরও বেশি অংশগ্রহণকারী এবং ১৪০০ জনেরও বেশি উত্তরদাতাদের কাছ থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে একাধিক পরীক্ষা পরিচালনা করেছেন। প্রতিটি পরীক্ষায়, গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের মাধ্যে একটি সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া যেমন রাগ, বিনোদন, আকাঙ্ক্ষা বা দুঃখ অথবা একটি নিরপেক্ষ মানসিক অবস্থার উন্মেষ ঘটিয়ে তারপর অংশগ্রহণকারীদের একটি চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যের সামনে উপস্থিত করেন। সমস্ত পরীক্ষায় দেখা যায় যে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে একটি নিরপেক্ষ মানসিক অবস্থার তুলনায় ক্রোধ যে কোনো ব্যক্তিকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে তার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতাকে উন্নত করেছে। গবেষকরা ২০১৬ এবং ২০২০ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় সংগৃহীত সমীক্ষার একটি সিরিজ থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। নির্বাচনের আগে জনগণকে তাদের পছন্দের প্রার্থী না জিতলে তারা কতটা ক্ষুব্ধ হবে তা মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছিল। নির্বাচনের পরে, তাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় যে তারা ভোট দিয়েছে কিনা এবং কাকে ভোট দিয়েছে। যে সব অংশগ্রহণকারীরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তাদের প্রার্থী জিততে না পারলে তারা রাগান্বিত হবেন তারা অনেক বেশি সংখ্যায় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে অংশ নিয়েছিল কিন্তু তারা কোন প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে তার উপর রাগ কোন প্রভাব ফেলেনি।
লেঞ্চের মতে, যে কোনো ব্যক্তিকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে এবং বারংবার তার লক্ষ্য অর্জনে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে লক্ষ্যগুলোকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হতে হবে তবেই ক্রোধের প্রভাবে লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিটি ঝাঁপিয়ে পড়বে অন্যথায় সহজ লক্ষ্য থাকলে এই পরিস্থিতি তৈরি হবে না। লেঞ্চ আরও উল্লেখ করেছেন যে রাগের মতোই অন্য আবেগ যেমন বিনোদন বা ইচ্ছাও কিছু ক্ষেত্রে বর্ধিত লক্ষ্য অর্জনের সাথে যুক্ত। ফলত এটা স্পষ্ট যে আবেগ যা প্রায়শই নেতিবাচক হিসাবে বিবেচিত হয় – যেমন রাগ, একঘেয়েমি বা দুঃখ – মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিপন্ন হতে পারে। মানুষ প্রায়শই হাতিয়ার হিসাবে ইতিবাচক আবেগকে নেতিবাচকের চেয়ে বেশি ব্যবহার করতে পছন্দ করে এবং নেতিবাচক আবেগকে অবাঞ্ছিত এবং খারাপ হিসাবে দেখে থাকে। কিন্তু এই গবেষণা দেখায় যে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক আবেগের সংমিশ্রণ মানুষকে ভালো থাকতে সাহায্য করে এবং কিছু পরিস্থিতিতে নেতিবাচক আবেগকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × three =