শৈশবে সাধারণ সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনেক অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর নয়- চিন্তিত বিজ্ঞানীরা

শৈশবে সাধারণ সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনেক অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর নয়- চিন্তিত বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৩ নভেম্বর, ২০২৩

এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার উচ্চ হারের কারণে শিশু এবং সদ্যজাতদের মধ্যে সাধারণ সংক্রমণের চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত বহু ওষুধ বিশ্বের অনেক অংশে আজ আর কার্যকর নয়। ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির নেতৃত্বে করা এই গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দ্বারা সুপারিশকৃত অনেক অ্যান্টিবায়োটিক যা নিউমোনিয়া, সেপসিস (ব্লাডস্ট্রিম ইনফেকশন) এবং মেনিনজাইটিসের মতো শৈশব সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হত তাদের কার্যকারিতা ৫০% হ্রাস পেয়েছে। ফলত এটা স্পষ্ট যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী নির্দেশিকা পুরানো এবং তা অবিলম্বে সংশোধন প্রয়োজন৷ প্রতিবেশী দেশ ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গুরুতরভাবে প্রভাবিত হয়েছে, যেখানে প্রতি বছর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধীর ফলে হাজার হাজার শিশুদের মৃত্যু ঘটছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করেছে যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) মনুষ্য জাতির ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের শীর্ষ ১০টি হুমকির মধ্যে অন্যতম। প্রতি বছর সারা বিশ্বে নবজাতকদের মধ্যে আনুমানিক তিন মিলিয়ন শিশুরা সেপসিসে আক্রান্ত হয়, এবং ৫৭০,০০০ শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার চিকিত্সার জন্য কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবের কারণে ঘটে। সম্প্রতিকালে ল্যান্সেট জার্নালে তথ্যটি প্রকাশিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে অ্যান্টিবায়োটিক সেফট্রিয়াক্সোন নবজাতকদের ক্ষেত্রে সেপসিস বা মেনিনজাইটিসের চিকিৎসার জন্য প্রতি তিন জনের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে কার্যকরী। শিশুদের অনেক সংক্রমণ যেমন নিউমোনিয়া এবং মূত্রনালীর সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়াতেও এই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
আরেকটি অ্যান্টিবায়োটিক, জেন্টামাইসিন, সেপসিস এবং মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম জনের চিকিত্সায় কার্যকর। জেন্টামাইসিন সাধারণত অ্যামিনোপেনিসিলিনের সাথে ব্যবহার করা হয় এবং গবেষণায় দেখা গেছে যে শিশু এবং নবজাতকদের রক্ত প্রবাহের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রেও এই ওষুধের কার্যকারিতা কম। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় এএমআর শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যাপ্রবণ, কারণ নতুন অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা করার এবং শিশুদের জন্য ব্যবহার করার পরিসর কম। মানুষের দেহে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যাওয়া আমাদের ভাবনার চেয়ে আরও দ্রুত গতিতে বাড়ছে। মাল্টিড্রাগ-প্রতিরোধী সংক্রমণ এবং প্রতি বছর হাজার হাজার শিশুর অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু বন্ধ করার জন্য আমাদের অবিলম্বে নতুন সমাধান প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 5 =