মানুষের বিলুপ্তির কারণ

মানুষের বিলুপ্তির কারণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২২ নভেম্বর, ২০২৩

প্রযুক্তিগতভাবে এবং চিকিৎসা শাস্ত্রের দিক দিয়ে মনুষ্যজাতির অগ্রগতি দেখে মানবতার ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি সম্পর্কে আশাবাদী বোধ করা সহজ। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করলে খুব তাড়াতাড়ি এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে একটি প্রজাতি হিসাবে আমাদের সাফল্যের নিশ্চয়তা খুবই কম। সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দলের নতুন গবেষণা ১৪ টি ভিন্ন ভিন্ন “বিবর্তনমূলক ফাঁদ” এর রূপরেখা দেয় যা শেষ পর্যন্ত আমাদের বিশ্বের এই বিশাল জনসংখ্যাকে মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করে। গবেষক দলের অভিমত এই সমস্যার একটি কারণ হল আমরা নিজেদের জন্য খুব ভালো কাজ করে চলেছি কিন্তু আমাদের আধিপত্য এবং সাফল্য আমাদের বিপজ্জনক পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে আমরা ‘পলিক্রাইসিস’-এর মধ্য দিয়ে চলেছি অর্থাৎ এখন আমাদের জন্য একাধিক ঝুঁকি রয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে মহামারী পর্যন্ত – অ্যানথ্রোপোসিন যুগকে পরবর্তী সময়ের চেয়ে শীঘ্রই শেষ করার হুমকি দিচ্ছে। স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী পিটার সোগার্ড জর্গেনসেনের মতে একটি প্রজাতি হিসাবে মানুষ অবিশ্বাস্যভাবে সৃজনশীল, আমরা অনেক পরিস্থিতিতে উদ্ভাবন এবং মানিয়ে নিতে সক্ষম এবং আশ্চর্যজনকভাবে ব্যাপক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারি। কিন্তু এই ক্ষমতা অনিচ্ছাকৃত ফলাফলে পরিণত হয়। মানবজাতির জন্য এই ১৪টি সম্ভাব্য বিবর্তনমূলক ফাঁদের মধ্যে, পাঁচটিকে বিশ্বব্যাপী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে: সরলীকরণ (খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য যে কোনো ব্যবস্থা খুব বিশেষায়িত হয়ে উঠছে, যেমন একক চাষ), বৃদ্ধির জন্য বৃদ্ধি (নিজেদের ক্ষতি করে বৃদ্ধির একটি অবিরাম সাধনা), ওভারশুট (পৃথিবী যা আমাদের দিতে পারে তার চেয়ে বেশি ব্যবহার করা), বিভাজন (আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ), এবং সংক্রমণ (উদাহরণস্বরূপ সংক্রামক রোগ)। অন্য পাঁচটি প্রযুক্তিগত ফাঁদ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন – অবকাঠামোগত লক-ইন (যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি), রাসায়নিক দূষণ, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের মতো প্রযুক্তি, স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ব্যবহার (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), এবং ভুল তথ্য। বাকি চারটিকে গবেষকরা স্ট্রাকচারাল ট্র্যাপ বা কাঠামোগত ফাঁদ বলেছেন। এগুলো হল স্বল্প-মেয়াদী, অতিরিক্ত ব্যবহার, জীবজগৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং স্থানীয় সামাজিক পুঁজির ক্ষতি, যেখানে একটি ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বিশ্ব সামাজিক মিথস্ক্রিয়া বন্ধ করে দেয় এবং সম্ভাব্যভাবে আরও বিভাজনের সৃষ্টি করে।
তাছাড়াও, এর মধ্যে ১২টি ক্ষতির শিখরে রয়েছে বলে মনে করা হয়। শুধুমাত্র স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্থানীয় সামাজিক পুঁজির ক্ষতির কারণে এখনও সমস্যাগুলো তৈরি হয়নি। এমনকি আরও উদ্বেগজনকভাবে, এই ফাঁদগুলো একে অপরকে শক্তিশালী করার প্রবণতা রাখে, যার অর্থ সম্ভবত আমরা একাধিক ফাঁদে আটকে পরব। তবে আশার কথা হল আমরা প্রজাতি হিসাবে অদূরদর্শী এবং ধ্বংসাত্মক হতে পারি, তবে আমরা সৃজনশীল, উদ্ভাবনী এবং সহযোগীও বটে। তাই আমরা আশাবাদী যে আমাদের ভাগ্য এখনো লেখা হয়নি। একটা খুব সাধারণ জিনিস যা আমরা প্রত্যেকে করতে পারি তা হল প্রকৃতি এবং সমাজের দিকে আরও বেশি নজর দেওয়া এবং আমাদের নিজস্ব স্থানীয় ক্রিয়াকলাপের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় বৈশ্বিক পরিণতি সম্পর্কেও শেখা।