অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস নিয়ে গবেষণায় সাফল্য

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস নিয়ে গবেষণায় সাফল্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৭ নভেম্বর, ২০২৩

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) এমন একটি ঘটনা যেখানে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবীগুলি সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়ে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। এই প্রতিরোধের কারণে সংক্রমণ নিরাময় করা আরও কঠিন হয়ে যায়, ফলে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এএমআর মাত্রা বৃদ্ধির কারণে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলি ২০৫০ সালের মধ্যে তাদের কার্যকারিতা হারাবে বলে গবেষকদের ধারণা। সেক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করার জন্য নতুন পদ্ধতির সন্ধান গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে। এই গবেষণায় সুপারমলিকুলার রসায়নের নীতিগুলি কাজে লাগিয়ে, অণুগুলির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া অন্বেষণ করে, সাফল্য অর্জন করে গেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এমন অণু নিয়ে গবেষণায় করা হয়েছে যা ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে দক্ষ কিন্তু মানুষের সুস্থ কোশে তাদের বিষাক্ততার প্রভাব খুবই কম।
১৮-২৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলা ওয়ার্ল্ড এএমআর সচেতনতা সপ্তাহে, এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নতুন গবেষণাটি কেম – জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্বারা পরিচালিত এই বিশ্বব্যাপী প্রচারের লক্ষ্য হল ড্রাগ-প্রতিরোধী সংক্রমণের উত্থান কমানো এবং বিস্তার কমানোর আশায় এএমআর সম্পর্কে সচেতনতা ও বোঝাপড়া বাড়ানো। এএমআর -এর বিশ্বব্যাপী প্রভাবের তারিখের অনুমান অনুসারে, অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের সরাসরি ফলাফল হিসাবে ২০১৯ সালে ১.২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এবং মোটামুটি লক্ষাধিক লোক মারা গেছে। এইচআইভি/এইডস বা ম্যালেরিয়ার চেয়ে বার্ষিক বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী এএমআর- এর সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য এই গবেষণাটি এক নতুন পদ্ধতির সন্ধান দিতে পারে।
সিন্থেটিক আয়ন পরিবহনকারীর উপর ভিত্তি করে এই কাজে প্রথমবার গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে ব্যাকটেরিয়ায় লবণের (সোডিয়াম এবং ক্লোরাইড আয়ন) ইনফ্লাক্সে একাধিক জৈব রাসায়নিক ঘটনা ঘটে যা ব্যাকটেরিয়া কোশকে মৃত্যুর দিকে চালিত করে, এমন স্ট্রেন যা বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধী যেমন মেথিসিলিন-প্রতিরোধী স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস (MRSA) তারও বিনাশ হয়।
ব্যাকটেরিয়া তাদের কোশের ঝিল্লির ভিতরে আয়নগুলির একটি স্থিতিশীল ঘনত্ব বজায় রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে এবং যখন এই সূক্ষ্ম ভারসাম্য ব্যাহত হয় তখন স্বাভাবিক কোশের কার্যকারিতাকে ধ্বংস হয় ফলে কোশগুলি বেঁচে থাকতে পারে না। গবেষণায় সিন্থেটিক অণুগুলি ক্লোরাইড আয়নগুলির সাথে আবদ্ধ করে, এটিকে একটি ‘ফ্যাটি আবরণে’-এ মুড়ে দেওয়া হয় যা সহজেই ব্যাকটেরিয়ার ঝিল্লিতে দ্রবীভূত হয়ে স্বাভাবিক আয়নিক ভারসাম্য ব্যাহত করে। এই জাতীয় ফলাফলগুলি বর্তমানে প্রাপ্য অ্যান্টিবায়োটিকের একটি কার্যকর বিকল্প হিসাবে অ্যানায়ন ট্রান্সপোর্টারগুলির সম্ভাব্য বিকাশের পথ দেখায়, যা ক্রমবর্ধমান এএমআর-এর সমস্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জরুরীভাবে প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three − 1 =