বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবল বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি তীব্র করে

বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবল বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি তীব্র করে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ নভেম্বর, ২০২৩

এক নতুন গবেষণা অনুযায়ী বিশ্ব উষ্ণায়নের সাথে সাথে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা এবং বারংবার বৃষ্টিপাত হওয়ার প্রবণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পটসডাম ইনস্টিটিউট অফ ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ (পিআইকে) এর গবেষকদের বিশ্লেষণ দেখা যায় যে জলবায়ু মডেলের দেওয়া সূচনার চেয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দ্রুত বাড়তে পারে। জার্নাল অফ ক্লাইমেট-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় ম্যাক্স কোটজ ব্যাখ্যা করেছেন যে তাদের গবেষণা থেকে এটা নিশ্চিত যে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রতিটি বৃদ্ধির সাথে ভারী বৃষ্টিপাতের তীব্রতা এবং প্রবণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো ১৮৩৪ সালের ক্লাসিয়াস-ক্ল্যাপেয়ারন সম্পর্কের ভৌত তত্ত্বকে অনুসরণ করে, যা প্রতিষ্ঠিত করেছিল যে উষ্ণ বায়ু আরও জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে। পিআইকে-এর গবেষক অ্যান্ডার্স লেভারম্যান বলেন যে জলবায়ু মডেল ব্যবহার করে সমাজের উপর জলবায়ুর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে এই প্রভাবগুলো যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক খারাপ হতে পারে। ভারী বৃষ্টিপাত হবে এবং তা অনেক ঘন ঘন হবে। এর জন্য জনসাধারণকে প্রস্তুত থাকতে হবে। পৃথিবীতে দৈনিক বৃষ্টিপাতের অতিরিক্ত মাত্রা, বারংবার বৃষ্টিপাত হওয়ার প্রবণতা এবং তীব্রতার পরিবর্তন সামাজিক কল্যাণ, অর্থনীতি এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বন্যা পরিস্থিতি যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনই ভূ-গর্ভস্থ জলের প্রাপ্যতার উপরও প্রভাব পরবে যা প্রাণীর অস্তিত্ব ও আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বন্যার তীব্রতা পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলে বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও কিছু জায়গায় একটি বড়ো অনিশ্চয়তা রয়েছে। আর্দ্র অঞ্চলের ৭৫.৯% ভূমি এলাকায় বন্যার তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু অর্ধ-আর্দ্র এবং অর্ধ-শুষ্ক অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান বন্যার তীব্রতা যথাক্রমে ৬৮.৭% এবং ৬৩.৪%। তুষার অধ্যুষিত অঞ্চল যেমন, উত্তর ও মধ্য ইউরোপে বন্যার তীব্রতা হ্রাস পাচ্ছে এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত হ্রাস পাচ্ছে। গবেষকরা ২১টি স্টেট-অফ-দি-আর্ট ক্লাইমেট সিমুলেশনে (CMIP-6) ভূমিতে দৈনিক বৃষ্টিপাতের চরম মাত্রার তীব্রতা এবং ফ্রিকোয়েন্সি বিশ্লেষণ করেছেন এবং CMIP-6 মডেলের দ্বারা প্রক্ষিপ্ত পরিবর্তনগুলোকে ঐতিহাসিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা পরিবর্তনের সাথে তুলনা করেছেন৷ তারা যে পদ্ধতি প্রয়োগ করে তা প্যাটার্ন-ফিল্টারিং কৌশলের উপর নির্ভর করে যার মাধ্যমে তারা আলাদা করতে পারে জলবায়ু ব্যবস্থার কোন পরিবর্তনগুলো মানুষের নির্গমনের ফলে সৃষ্ট এবং কোনটি নয়। যদিও বেশিরভাগ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা এবং ফ্রিকোয়েন্সি দুই বৃদ্ধি পায়, কিন্তু সমীক্ষা অনুসারে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বেশি বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রীষ্মমন্ডল এবং উচ্চ-অক্ষাংশ জুড়ে ঘটে, যেমন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বা উত্তর কানাডায়। এই পরিবর্তনগুলো ক্লাসিয়াস-ক্ল্যাপেয়ারন সম্পর্ককে অনুসরণ করে এবং নিশ্চিত করে যে বায়ু নয় বরং তাপমাত্রা চরম বৃষ্টিপাতের ঘটনার বৈশ্বিক পরিবর্তনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। ফলত সুসংবাদটি হল যে চরম বৃষ্টিপাতের ভবিষ্যতবাণী করা সহজ এবং খারাপ দিক হল যদি আমরা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে থাকি তবে বৃষ্টিপাত আরও তীব্রতর থেকে তীব্রতম হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine + eighteen =