ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-র (MIT) ভূতাত্ত্বিকবিদরা স্মেক্টাইট নামে পরিচিত একটি কাদামাটি খনিজ শনাক্ত করেছেন যা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে কার্বন গ্রহণ এবং সঞ্চয় করার অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী, সম্ভাব্যভাবে আমাদের পৃথিবীকে শীতল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণাটি নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে। স্মেক্টাইট সমুদ্রতলের জটিল স্তরগুলোর মধ্যে পাওয়া যায়, আর বাদ্যযন্ত্র অ্যাকর্ডিয়নের মতো এর গঠন জৈব কার্বন আটকাতে সক্ষম যা প্লেট টেকটোনিকের সময়কাল থেকে ঘটে চলেছে। মহাদেশীয় প্লেটগুলোর সাথে মহাসাগরীয় ভূত্বকের সংঘর্ষের ফলে, শিলা ভূপৃষ্ঠের দিকে ঠেলে ওপরে ওঠে এবং শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে স্মেক্টাইট সহ বিভিন্ন খনিজে পরিণত হয় যা পরে সমুদ্রের তলদেশে ফিরে আসে। স্মেক্টাইট তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাঁজের মধ্যে মৃত জীবের অবশিষ্টাংশকে আটকে রাখে, যার ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড রূপে কার্বনকে বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করা থেকে বাধা দেয়। এমআইটি গবেষকরা, বিগত ৫০০ মিলিয়ন বছরে যে কয়েকটি বড়ো টেকটোনিক ইভেন্টের মাধ্যমে স্মেক্টাইট উৎপন্ন হচ্ছে তার সন্ধান করেছেন। তাদের অনুসন্ধান থেকে জানা যায় যে প্রতিবার এই কাদামাটি পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হলে, তা পৃথিবীকে শীতল করতে পারবে, এমনকি বরফ যুগকে প্ররোচিত করতে পারবে।
গবেষণাটি একই দলের পূর্ববর্তী কাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে গ্রীষ্মমন্ডলীয় টেকটোনিক ইভেন্টগুলো সমুদ্রের কিছু শিলাকে উন্মুক্ত করেছে, যা জলবায়ু-প্রভাবিত খনিজ গঠনের দিকে পরিচালিত করে।
তাদের অনুমান নিশ্চিত করার জন্য, দলটি ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড অনুসন্ধান করে দেখার চেষ্টা করেন ম্যাগম্যাটিক খনিজ কীভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং তা কী ধরনের কাদামাটি তৈরি করে। তারা এই ফলাফলগুলোর উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর কার্বন চক্রের সিমুলেশনে প্রতিটি খনিজের প্রভাব নির্ধারণ করতে চেষ্টা করেন। স্মেক্টাইট শুধুমাত্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় টেকটোনিকের একটি উপাদান হিসাবে নয় বরং অবিশ্বাস্যভাবে জৈব কার্বন গ্রহণকারী হিসাবে প্রতিপন্ন হয়। কার্বন সংরক্ষণের উপর স্মেক্টাইটের ক্রমবর্ধমান প্রভাব, যদিও আপাতদৃষ্টিতে একটি শতাংশের এক-দশমাংশেরও কম, ভূতাত্ত্বিক সময়কালের তুলনায় যথেষ্ট। গবেষকরা অনুমান করেন যে এই ছোটো শতাংশ গ্রহের চারটি প্রধান বরফ যুগকে ট্রিগার করার জন্য যথেষ্ট ছিল।
এই আবিষ্কারটি কেবল পৃথিবীর জলবায়ু ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের বোঝা উন্নত করে তাই নয় বরং ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন কৌশলগুলোর জন্য সম্ভাবনাও উন্মুক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং দ্বারা হুমকির মুখে কার্বন সমৃদ্ধ পারমাফ্রস্ট অঞ্চলগুলো স্থিতিশীল করতে স্মেক্টাইট ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশ্ব যখন ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংকটের সাথে মোকাবিলা করছে, বৈশ্বিক কার্বন চক্রের সমস্ত দিক বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানব-প্ররোচিত জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলো কাজে লাগানোর সম্ভাবনাকেও তুলে ধরে।