ইথিলিন বীজের বিকাশ এবং চাপ সহনশীলতা উভয়ই বৃদ্ধি করে

ইথিলিন বীজের বিকাশ এবং চাপ সহনশীলতা উভয়ই বৃদ্ধি করে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

অন্য যেকোনো জীবের মতোই, গাছপালাও চাপের বা স্ট্রেসের সম্মুখীন হয় যেমন অতিরিক্ত তাপ বা খরা। এই সময় গাছপালার বৃদ্ধি বা উত্পাদন দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকদের জন্য এই বিষয়টা একটা সমস্যার কারণ তাই অনেক বিজ্ঞানী গাছেদের আরও সহিষ্ণু করতে তাদের মধ্যে জিনগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন। তবে বেশি ফসল ফলনের জন্য পরিবর্তিত উদ্ভিদের ক্ষেত্রে চাপ সহনশীলতা কমে যায় কারণ তারা বৃদ্ধির জন্য অনেক বেশি শক্তি খরচ করে। একইভাবে, স্ট্রেস সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদের প্রায়শই উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায় কারণ তারা বৃদ্ধির বদলে সুরক্ষায় বেশি শক্তি খরচ করে। এই সমস্যা শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি কঠিন করে তোলে।
গাছপালা মাটি আঁকড়ে থাকে ঘুরে বেড়াতে পারে না, তাই তারা তাপ এবং খরার মতো চাপপূর্ণ পরিবেশগত পরিস্থিতি এড়াতেও পারে না। পরিবেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের সংকেত যেমন আলো এবং তাপমাত্রা গ্রহণ করে তারা ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, বিকাশিত হয় এবং চাপের পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। পরিবেশগত অবস্থার সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে গাছপালা বিভিন্ন হরমোন তৈরি করে যা একটি নিয়ন্ত্রক নেটওয়ার্কের অংশ। প্রায় ১০০ বছর আগে ইথিলিন প্রথম একটি গ্যাসীয় উদ্ভিদ হরমোন হিসাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল। তারপর থেকে, গবেষণায় দেখা গেছে যে স্থলভাগের সমস্ত উদ্ভিদ ইথিলিন তৈরি করে। বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং চাপের প্রতি সাড়া দেওয়ার পাশাপাশি, এই হরমোন অন্যান্য প্রক্রিয়ার সাথেও জড়িত যেমন পাতার রঙ পরিবর্তন করা বা ফল পাকতে সাহায্য করা।
গবেষকরা একটি পরীক্ষায় অন্ধকার ঘরে বীজ অঙ্কুরিত করার চেষ্টা করেন। বীজের অঙ্কুরোদগম, উদ্ভিদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যখন, অনুকূল পরিস্থিতিতে, বীজ সুপ্ত থেকে চারা গাছে রূপান্তরিত হয়। এই পরীক্ষায় গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেন বেশ কয়েক দিন ইথিলিন গ্যাসের সংস্পর্শে আসলে বীজের ওপর কী প্রভাব পরে? গবেষকরা সেই বীজ থেকে চারাগাছ হওয়ার পরও গাছগুলো বড়ো করেন যাতে তারা সেই গাছ থেকে ভবিষ্যতের পরীক্ষার জন্য আরও বীজ পেতে পারেন। আলোর নীচে চারাগাছ রাখার বেশ কিছু দিন পরে, গবেষকরা দেখেন সংক্ষিপ্তভাবে ইথিলিন গ্যাসে রাখা গাছগুলো বেশি বড়ো হয়েছে এবং ইথিলিন গ্যাসের সংস্পর্শে আসেনি এমন গাছের তুলনায় তাদের পাতাগুলো আকারে অনেক বড়ো, এবং তাদের শিকড় অনেক জটিল। গবেষকরা আরও দেখেন যে এই উদ্ভিদগুলো তাদের সমগ্র জীবনকাল জুড়ে দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। একই ফলাফল টমেটো, শসা, গম এবং এক ধরনের শাকের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ইথিলিন গ্যাসের সংস্পর্শে আসার ফলে বিভিন্ন চাপের পরিস্থিতি যেমন লবণের মাত্রা, উচ্চ তাপমাত্রা এবং কম অক্সিজেন থাকা সত্ত্বেও এই গাছেদের সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়। গবেষকরা মনে করেন ইথিলিন সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে। কার্বন ফিক্সেশন সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার অন্তর্গত, যেখানে উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডল থেকে CO₂ গ্রহণ করে এবং শর্করা তৈরির জন্য বিল্ডিং ব্লক হিসাবে CO₂ অণু ব্যবহার করে। পরীক্ষাগারে গবেষকরা দেখেন যে কার্বন ফিক্সেশন পদ্ধতি বৃদ্ধি পেয়েছে – যার অর্থ উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডল থেকে অনেক বেশি পরিমাণে CO₂ গ্রহণ করছে। এর ফলে উদ্ভিদে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। উদ্ভিদের শক্তি সঞ্চয়কারী অণু, স্টার্চ এবং দুটি শর্করা, সুক্রোজ এবং গ্লুকোজ, যা উদ্ভিদের জন্য দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে সেগুলো বৃদ্ধি পায় এবং এই অণুগুলো যেমন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তেমনই উদ্ভিদের সহনশীলতা বৃদ্ধি করে।