চোখের ভেতর আরো ২০০ চোখ

চোখের ভেতর আরো ২০০ চোখ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ অক্টোবর, ২০২১

একটা চোখের ভেতর ২০০টা লেন্স। এভাবে দুটো পাতা মোড়া চোখে ৪০০টা। প্রতি লেন্সের সাইজ এক মিলিমিটার পর্যন্ত। আজকের দিনের কোনো জীবন্ত প্রাণীর নয়। প্রায় ৩৯ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে বসবাসকারী সামুদ্রিক প্রাণী ট্রিলোবাইটের এমনই বিষ্ময়কর চোখ ছিল। সম্প্রতি সায়েন্টেফিক রিপোর্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ থেকে জানা যাচ্ছে ৫০ বছর আগের ফসিলের এক্স-রে প্লেট পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য আবিস্কার করেছেন কোলোগন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ ব্রিগিট স্কোনেমান। প্রায় ১০ কোটি বছর ট্রিলোবাইট পৃথিবীতে বসবাস করতো। প্রাণীটির বিজ্ঞান সম্মত নাম ফাকপ্স জিসোপ্স।
তবে ট্রিলোবাইটের ফসিল নিয়ে গবেষণা এই কিন্তু প্রথম নয়। ১৯৭০ এর দশকে এক্সরে ব্যবহার করে ট্রিলোবাইট ফসিলের গবেষণা করেন একজন রেডিওলজিস্ট উইলহেলম্ স্টারমার। স্টারমারের লক্ষ্য ছিল ট্রিলোবাইটের অপটিক নার্ভ সম্পর্কিত আবিষ্কার। সেসময়ের আগে পর্যন্ত মনে করা হতো ফসিল থেকে হাড় ও দাঁতের মতো শক্ত শারীরিক উপাদান ছাড়া অন্য নরম শারীরিক অংশ যেমন অন্ত্র বা নার্ভ ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। রেডিওলজিস্ট হিসেবে স্টারমার জানতেন এক্স-রে’র মাধ্যমে অনেক অজানা তথ্য পাওয়া সম্ভব। এভাবে গত শতকের সাতের দশকে স্টারমারের নয়া প্রচেষ্টা ও আবিস্কারে দেখা যায় ফসিলের নার্ভ সিস্টেম অসংখ্য তন্তু দ্বারা গঠিত, অদ্ভুতভাবে যা দেখতে ফোটোরিসেপটর কোষের মতো। এদের পারিভাষিক নাম ওমাটিডিয়া৷ বলাই বাহুল্য ৫০ বছরে জীবাশ্মবিদ্যায় আমূল বদল এসেছে। আজকের জীবাশ্মবিদ্যায় ফসিল থেকে খুব সহজেই শরীরের বিভিন্ন সংবেদনশীল টিস্যুরও পুঙ্খানুপুঙ্খ হদিস মেলে। স্কোনেমান এবং তাঁর গবেষক দল স্টারমারের মূল এক্সরে প্লেটটি আরো নিঁখুত ভাবে আধুনিক সিটি টেকনোলজির মাধ্যমে দেখেন যে সূত্রগুলি (এক্ষত্রে এক্স-রে প্লেটে নার্ভের ঐ তন্তুচিহ্ন গুলি) স্টারমার চিহ্নিত করেছিলেন সেগুল অপটিক নার্ভেরই তন্তু বা ফাইবার বটে,কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে তন্তু বা ফাইবারে পাখির ছোটো বাসার মতো ফেনার স্তুপ দেখা যায়। এই স্তুপ গুলি আসলে উভয় দিকের মূল চোখের মধ্যে গুচ্ছ চোখের ইঙ্গিতবাহী। স্কোনেমান এবং দল আরো গভীর পর্যবেক্ষণে আবিষ্কার করেন উভয় পাশের মূল চোখে প্রায় ২০০ টি করে ১ মিলিমিটার আয়তনের লেন্স রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two − 1 =