সৌরজগতের প্রান্তে প্লুটো কতটা সূর্যালোক পায়?

সৌরজগতের প্রান্তে প্লুটো কতটা সূর্যালোক পায়?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ জানুয়ারী, ২০২৪

৫৯০ কোটি কিলোমিটার— সূর্য থেকে প্লুটোর দূরত্ব মেপে এই পরিসংখ্যানই পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আবার যখন প্লুটো ও পৃথিবী দুটি বিপরীত দিকে থাকে তখন পৃথিবী থেকে এই বামন গ্রহের দূরত্ব প্রায় ৭৫০ কোটি কিলোমিটার। প্লুটো, সূর্য থেকে পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৩৯ গুণ বেশি দূরে। এক সময় প্লুটোকে আমাদের সৌর জগতের সূর্যের গ্রহদের দলেই রাখা হত। বলা হত, সূর্যের ন’টি গ্রহ রয়েছে। তবে পরে গবেষণা করে দেখা যায়, প্লুটো কোনও গ্রহ নয়। গ্রহের সব বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে নেই। প্লুটো আকারে এতটাই ছোটো যে, তাকে বামন গ্রহের আখ্যা দেওয়া হয়। এই প্লুটো যে ধরনের দিনের আলোয় আলোকিত হয় তা আমাদের পৃথিবী থেকে বেশ আলাদা। সূর্যের থেকে এই বিশাল দূরত্বের কারণে পৃথিবীতে আসা সূর্যালোকের ১ শতাংশেরও কম আলো পায় এই বামন গ্রহ। নাসার বিজ্ঞানীদের মতে, প্লুটোর বুকে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে সূর্যকে একটি ছোটো উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে দেখা যাবে এর বেশি কিছু নয়। পৃথিবীতে রাতের আকাশে যেমন তারা দেখা যায়, সূর্যও প্লুটোর আকাশে সেই আকারেই দৃশ্যমান হবে। যদিও সে নক্ষত্র হবে সব চেয়ে উজ্জ্বল। এ হেন প্লুটোয় স্বাভাবিক ভাবেই সূর্যের অতি সামান্য আলো পৌঁছয়। তবে এই দূরবর্তী অবস্থান সত্ত্বেও, প্লুটোতে পৌঁছানো সূর্যালোক সম্পূর্ণরূপে দুর্বল নয়। নাসা কর্মকর্তাদের মতে, যে আলো এই বামন গ্রহে পৌঁছায় তা পড়ার জন্য যথেষ্ট। পৃথিবীর সূর্য প্লুটোর ভরদুপুরে মধ্যগগনের সূর্যের চেয়েও এক হাজার গুণ বেশি উজ্জ্বল। তবে যদি পৃথিবীর পূর্ণিমার চাঁদের সঙ্গে প্লুটোর সূর্যের তুলনা টানা হয়, তবে কিন্তু চাঁদ হেরে যাবে। বিজ্ঞানীরা জানান, পৃথিবীতে পূর্ণিমার চাঁদকে যতটা উজ্জ্বল দেখায়, প্লুটোর সূর্য তার চেয়ে অন্তত ৩০০ গুণ বেশি জ্বলজ্বলে। সব চাইতে দূরবর্তী সূর্যালোক সূর্য থেকে প্লুটো পৌঁছাতে সময় নেয় প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা। সত্যি এটা ভেবে দেখার মতো যে আমাদের সৌরজগত কতটা বিশাল। যখন সূর্যের আলো অবশেষে এসে পৌঁছায়, তখন বরফে ঢাকা প্লুটোর পৃষ্ঠে সেই আলো অতি ক্ষীণ ঔজ্জ্বল্য সৃষ্টি করে। প্লুটো থেকে সূর্যের আপাত আকারও বেশ ছোটো, বিজ্ঞানীরা অঙ্ক কষে দেখেছেন প্লুটো থেকে সূর্যকে যতটা বড়ো দেখায়, পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান সূর্য তার চেয়ে ৩৯ গুণ বড়ো। প্লুটোর আকাশ মূলত অন্ধকার তাই এক অদ্ভুত পরিবেশের সৃষ্টি হয় তবে তার মধ্যেও সূর্যই সবচেয়ে নজরকাড়া। সূর্যের আলো অনেক ম্লান হওয়া স্বত্তেও, তবুও মহাকাশের অন্ধকারে এটি আলোর বাতিঘর হিসাবে দেখা যায় বুঝিয়ে দেয় আমাদের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের বিস্তৃত প্রভাব।