উদ্ভিদ বা প্রাণী নয়, দুইয়ের সংমিশ্রণে এক অদ্ভুত জীবের জীবাশ্ম আবিষ্কার হয়েছে

উদ্ভিদ বা প্রাণী নয়, দুইয়ের সংমিশ্রণে এক অদ্ভুত জীবের জীবাশ্ম আবিষ্কার হয়েছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ জানুয়ারী, ২০২৪

প্রকৃতি প্রায়ই তার আদ্ভুত প্রাণীর সম্ভার নিয়ে সবাইকে অবাক করে দেয় এবং তাদের মধ্যে একটি সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। প্রাণী, উদ্ভিদ বা কোনো খনিজ পদার্থ নয়, এমনকি ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকও নয়। এই অদ্ভুত জীবটি ইউগলেনিড বলে পরিচিত – এবং এটি বিভিন্ন জীবের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ। ইউগলেনিড এমন এক ধরনের এককোশী ইউক্যারিওট যারা উদ্ভিদের মতো সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে এবং প্রাণীর মতো অন্যান্য প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে শক্তি অর্জন করে। প্রায় এক বিলিয়ন বছর আগে এই জলজ জীব অন্যান্য ইউক্যারিওট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, এবং বর্তমানে পৃথিবীতে এই জীবদের জীবাশ্ম সংক্রান্ত তথ্য খুব কম। সম্প্রতি এক দল বিজ্ঞানীর দাবী বছরের পর বছর ধরে, খোলসযুক্ত এই জীবেদের কৃমির মতো প্রাণীর ডিম বা অ্যালগাল সিস্ট বা ফার্ন স্পোর হিসাবে ভুল শনাক্ত করা হয়েছিল। এদের শরীরের ভিতরের দিকে ছোটো বৃত্তাকার ‘রিবের’ মতো গঠনের কারণে। এই জীবাশ্মগুলোকে বিজ্ঞানীরা কোনোভাবে নির্দিষ্ট শ্রেণীবিন্যাসে আন্তর্গত করতে পারেননি, তাই ১৯৬২ সালে, বিজ্ঞানীরা তাদের সিউডোসচিজাইয়া শেল নামে অভিহিত করেছিলেন। তারপর ২০১২ সালে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটে। জীবাশ্মবিদ বাস ভ্যান ডি স্কুটব্রুগ এবং পল স্ট্রোথার দুজনে মিলে কিছু মাইক্রোফসিল শনাক্ত করার কাজ করছিলেন যেগুলো প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর আগে ট্রায়াসিক-জুরাসিক সময়সীমা থেকে প্রাপ্ত কিছু পলি থেকে সংগৃহীত। বিজ্ঞানীদের মনে হয়েছিল যে এই বৃত্তাকার সিস্ট সম্ভবত ইউগলেনিড হতে পারে। ইউগলেনিডের আরও কিছু আদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পরিবেশে স্ট্রেস বা চাপের সম্মুখীন হলে এই জীব একটি প্রতিরক্ষামূলক গঠনে নিজেদের আবৃত করে এবং সুপ্ত অবস্থায় প্রবেশ করে। তখন এদের দেখতে অনেকটা ত্রিমাত্রিক আঙুলের ছাপ বা থাম্বপ্রিন্টের মতো। স্ট্রোথারের মতে তারা যে মাইক্রোফসিলের সন্ধান পেয়েছিলেন তার সাথে ইউগলেনার সিস্টের একটি অদ্ভুত মিল রয়েছে। তাই নিজেদের সংশয় দূর করতে স্ট্রথার এবং ভ্যান ডি স্কুটব্রুগ, সিউডোসচিজাইয়া-এর মতো জীবের জীবাশ্ম সংক্রান্ত তথ্য খোঁজার চেষ্টা করেন। প্রায় ৫০০টি্র মতো তথ্য সন্ধান করে তারা দেখেন যে এই জীবাশ্মগুলো বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন নামে নামাঙ্কিত হয়েছে তাই ঘটনাক্রমে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে। উন্নত মাইক্রোস্কোপিক কৌশল ব্যবহার করে, তারা তখন এই সিস্টগুলোর গঠন চিহ্নিত করেন। বিজ্ঞানীরা দেখেন জীবগুলোর প্রাচীরের কাঠামো পরিচিত কোনো জীবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। তাদের শরীরে উঁচু খাঁজগুলো অলঙ্করণের জন্য নয়, বরং প্রাচীরের অংশবিশেষশ এবং এই স্তরবিশিষ্ট কাঠামো অন্যান্য সবুজ শৈবালের থেকে স্পষ্টতই আলাদা। ভ্যান ডি স্কুটব্রুগের মতে সম্ভবত এদের আবরণের আড়ালে লুকিয়ে থাকার ক্ষমতা এই জীবগুলোকে পৃথিবীর প্রতিটি বড়ো ধরনের বিলুপ্তিতে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + 6 =