নাকের পিছনে এক নিষ্কাশন ব্যবস্থা

নাকের পিছনে এক নিষ্কাশন ব্যবস্থা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের মধ্যে একটি ‘গোপন পথ’ আবিষ্কার করেছেন যা এদের মস্তিষ্কের সাথে শরীরের লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের সংযোগ ঘটায়। লিম্ফ্যাটিক নেটওয়ার্ক মস্তিষ্ক থেকে নিষ্কাশন ব্যবস্থা গঠন করে যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং কার্যকারিতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
একই ফলাফল মানুষের ক্ষেত্রে দেখা গেলে, মস্তিষ্কে ও মেরুদণ্ডের তরল সঞ্চালনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের ধারণায় একটা মৌলিক পরিবর্তন আসবে। সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (CSF) একটি বর্ণহীন তরল যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পুষ্টি জোগায়, তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং মস্তিষ্কের কলা থেকে বর্জ্য পদার্থগুলো পরিষ্কার করে। মানুষের ক্ষেত্রে দিনে তিন থেকে পাঁচ বার সিএসএফ নিষ্কাশিত হয়ে তাজা সিএসএফ পৌঁছোয়। এই নিষ্কাশন বয়সের সাথে ধীর ধীর হতে থাকে, এটি ভালো ঘুম এবং বৌদ্ধিক কার্যকারিতার সাথে সম্পর্কযুক্ত।
সিএসএফ কিভাবে সঞ্চালিত হয় তা জানা মানুষের স্বাস্থ্য এবং রোগ সম্পর্কে জ্ঞানের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আমরা এখনও জানি না আমাদের মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত তরল কোথায় যায়। কয়েক দশক ধরে, বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডের চারপাশে বিশেষ শিরাগুলির মাধ্যমে সিএসএফ নিষ্কাশন হয়, তবে সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী এই ধারণা ভুল ।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইনস্টিটিউট ফর বেসিক সায়েন্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা, একটা অজানা রাস্তা চিহ্নিত করেছেন যা মস্তিষ্ক থেকে ঘাড়ের লিম্ফ নোডগুলিতে সিএসএফ বহন করে। সিএসএফ রক্ত সংবহন তন্ত্রের মাধ্যমে না হয়ে, শরীরের লিম্ফ নোডের মাধ্যমে সংবাহিত হতে পারে। জীবন্ত ইঁদুরের মস্তিষ্কে ফ্লুরোসেন্ট মার্কার দিয়ে, গবেষকরা ন্যাসোফ্যারিঞ্জিয়াল লিম্ফ্যাটিক প্লেক্সাস নামে একটি নেটওয়ার্ক ম্যাপ করেছেন, যা দেখায় যে এটি সিএসএফ এর নিষ্কাশনের একটি প্রধান কেন্দ্র। এই প্লেক্সাস, ত্রিমাত্রিক স্তরে ঘন হয়ে রয়েছে, লিম্ফ্যাটিক নালীর এই ঘন নেটওয়ার্ক ন্যাসোফারিনক্সের পরিধিকে ঘিরে থাকে। এই কাঠামো ঐ একই স্থানে কাঁকড়াখেকো ম্যাকাও-য়ের মধ্যেও দেখা যায়। এর থেকে গবেষকদের অনুমান এই অংশটা সমস্ত প্রাইমেটদের মধ্যে বিদ্যমান।
সাম্প্রতিক কিছু প্রমাণ দেখায় যে মানুষের মধ্যে, সিএসএফ ক্র্যানিয়াল স্নায়ুর মাধ্যমে গলার উপরের অংশে অনুনাসিক গহ্বরে নিষ্কাশন হতে পারে। মানুষের নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজঅর্ডারে, যেমন অ্যালজাইমার্স রোগে, টাউ বা অ্যামাইলয়েড বিটা-এর মতো বর্জ্য পদার্থ প্রায়ই মস্তিষ্কে জমা হয়। সিএসএফ সঞ্চালনে এগুলো দূরীভূত করা যায়। নেচার পত্রিকায় গবেষকরা জানিয়েছেন, একটা নির্ভরযোগ্য প্রাণীর মডেল অধ্যয়ন করে ফার্মাকোলজিক্যাল বা যান্ত্রিক উপায়ে লিম্ফ্যাটিক নালীগুলো সক্রিয় করে সিএসএফ নিঃসরণ করে অ্যালজাইমার্স রোগের অগ্রগতি রোধ করা যায় কিনা তারা তা দেখতে চাইছেন।