একা বয়স্ক মানুষের সঙ্গী পোষ্য

একা বয়স্ক মানুষের সঙ্গী পোষ্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

সাফল্যের পিছনে দৌড়ে বেড়ানো মানুষ শেষ বয়সে হয়ে পড়েন বন্ধুহীন, একা। পড়ে থাকে শুধু একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা। বয়স্ক মানুষদের মধ্যে শুধু একাকিত্বই নয় বেড়ে চলেছে ডিমেনশিয়া রোগের প্রকোপ। শুধু ভারত বলেই নয়, গোটা বিশ্ব জুড়েই ৬৫ বছরের বয়সি ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও সম্প্রতি পঞ্চাশের কোঠায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যেও বাড়ছে ডিমেনশিয়ার প্রবণতা। সামগ্রিক ভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ, ভাবনা চিন্তার অসুবিধা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা ইত্যাদি একাধিক সমস্যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ডিমেনশিয়া বলা হয়। একাকিত্ব এবং ডিমেনশিয়া দুটি ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী সমস্যা। অনুমান করা হয়েছে যে বিশ্বব্যাপী ডিমেনশিয়া আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২০১৯ সালে ৫৭ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ২০৫০ সালে ১৩০ থেকে ১৭৫ মিলিয়নের মধ্যে হবে।
সম্প্রতি প্রায় ৮০০০ মানুষকে নিয়ে করা এক নতুন গবেষণা প্রমাণ করে যে এই সব বয়স্ক ব্যক্তিদের বাড়িতে কোনো পোষা প্রাণী থাকলে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করেনা এবং ডিমেনশিয়া রোগের সূচনা থেকে বাঁচতে পারে। ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করা গবেষণা এটাই প্রমাণ করে যে কোনো পোষ্য ৬৫ বছরের বেশি বয়সী এবং একা বসবাসকারী প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কে বার্ধক্যের প্রভাব ফেলা রোধ করতে সহায়তা করে। পূর্বে গবেষণা প্রমাণ করেছে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অভাবে মস্তিষ্কের গঠনে পরিবর্তন আসে এবং স্বাস্থ্য এবং সুস্থতাকে প্রভাবিত করে। যে সমস্ত বয়স্ক লোকেরা তাদের বাড়ির বাইরে যেতে পারে না, তাদের একটি পোষা প্রাণী থাকলে সময় ভালো কাটবে। একা বসবাসকারী লোকদের তুলনায় তারা শারীরিকভাবে আরও সক্রিয় থাকতে পারবে, পোষ্যদের সঙ্গে কথা বললে তাদের মন ও মস্তিষ্ক দুই ভালো থাকবে। তারা তাদের প্রতিবেশীদের সাথেও সম্পর্ক রাখতে সক্ষম হবে। গবেষণায় এই ৮০০০ ব্যক্তির বৌদ্ধিক সক্ষমতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যারা সম্পূর্ণভাবে নিজের মতো জীবনযাপন করে তাদের তুলনায়, যারা শুধুমাত্র তাদের পোষ্য নিয়ে বসবাস করে তাদের তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে বৌদ্ধিক সক্ষমতার হ্রাসের হার কম দেখা গেছে- মৌখিক জ্ঞান, মৌখিক স্মৃতি এবং মৌখিক সাবলীলতা। যে সব বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের লোকজন এবং পোষা প্রাণী দুই নিয়ে বাস করে তাদের ক্ষেত্রে অবশ্য কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। তবে গবেষকরা এটাও মনে করেন যে বৌদ্ধিক সক্ষমতা মানে শুধু শব্দ প্রক্রিয়াকরণ, বোধগম্যতা এবং শব্দ মনে রাখা এবং সাবলীলভাবে কথা বলা নয় তার চেয়ে বেশি কিছু। মনোযোগ, যুক্তি, প্রক্রিয়াকরণের গতি, এপিসোডিক মেমরি এবং নির্ভুলতা বা অন্যান্য বৌদ্ধিক দক্ষতা ভবিষ্যতে এই সব প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে অধ্যয়নে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। তাছাড়াও তারা মনে করেন গবেষণায় মূলত সাদা চামড়ার মানুষদের উপর গুরত্ব আরোপ করা হয়েছে তাই ভবিষ্যতে বিভিন্ন জাতি বা গোষ্ঠীর ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে করা প্রয়োজন।