টাকা দিয়ে আনন্দ কেনা যায় না

টাকা দিয়ে আনন্দ কেনা যায় না

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

প্রায়শই অর্থনৈতিক উন্নতি নিম্ন-আয়ের দেশের মানুষদের ভালো থাকার এক নিশ্চিত উপায় হিসাবে নির্ধারিত হয়। সাম্প্রতিক দশকে বিশ্বব্যাপী সমীক্ষাগুলো একই কথা বলেছে- নিম্ন আয়ের দেশের তুলনায় উচ্চ-আয়ের দেশের লোকেরা ভালোভাবে জীবনধারণ করে এবং তাদের জীবন সন্তুষ্টি বেশি। তবে কী এই দৃঢ় পারস্পরিক সম্পর্ক এটাই প্রতিষ্ঠা করে যে শুধুমাত্র ধনী সমাজেই মানুষ সুখী হতে পারে। কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ICTA-UAB দ্বারা পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে এই সংযোগটি সর্বজনীন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করার উপযুক্ত কারণ রয়েছে। যদিও বেশিরভাগ সমীক্ষা, যেমন ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট, শিল্পোন্নত সমাজের নাগরিকদের কাছ থেকে হাজার হাজার প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করে, কিন্তু তারা প্রান্তিক বাসীদের, যাদের দৈনন্দিন জীবনে অর্থ একটি ন্যূনতম ভূমিকা পালন করে এবং যাদের জীবিকা সরাসরি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে তাদের গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করে না। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস (পিএনএএস) জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি সারা বিশ্বের ১৯ টি অঞ্চলে আদিবাসী এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের ২,৯৬৬ জনের উপর একটি সমীক্ষা চালান। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এরিক গালব্রেথ বলেছেন সমীক্ষার অন্তর্গত পরিবারের মাত্র ৬৪%-এর নগদ আয় ছিল। ফলাফলে দেখা গেছে যে সব পরিবারের আর্থিক সংগতি কম তাদের জীবনের প্রতি ভালোবাসা বা সন্তুষ্টি অনেক বেশি এবং তাদের জীবন সন্তুষ্টির মাত্রা বা স্কোর ধনী দেশগুলোর মতোই। ০ থেকে ১০ এর মাপকাঠিতে এই ধরনের প্রান্তিক স্তরে বসবাসকারী মানুষদের জীবনের প্রতি ভালোবাসা ও সন্তুষ্টির গড় পরিমাপ বা স্কোর দেখা গেছে ৬.৮ যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে গড় ৫.১ -এর কমও ছিল। আবার অন্যদিকে চারটি অঞ্চলের স্কোর ধনী স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলির মতো প্রায় ৮-এর থেকেও বেশি ছিল যদিও গবেষণায় দেখা গেছে এই সব প্রান্তিক অঞ্চলে মানুষেরা অনেক বঞ্চনা সহ্য করেছে এবং জীবনে বহু ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছে। উপরোক্ত ফলাফল এটাই প্রমাণ করে যে বস্তুগত সম্পদ ছাড়াই সমাজ তাদের সদস্যদের সুখী রাখতে পারে, ভালো রাখতে পারে। আয় এবং জীবনের প্রতি সন্তুষ্টিবোধের মধ্যে যে দৃঢ় সম্পর্ক দেখা যায় তা সর্বজনীন নয় এবং প্রমাণ করে যে সম্পদ – যা শিল্পোন্নত অর্থনীতি দ্বারা উত্পন্ন হয় — মানুষের সুখী জীবনযাপনের জন্য মৌলিকভাবে প্রয়োজন নয়। গবেষকদের মতে যদিও তারা আজ জানেন যে অনেক আদিবাসী এবং প্রান্তিক স্তরের মানুষের জীবনের প্রতি ভালোবাসা বা সন্তুষ্টির মাপকাঠি বেশি কিন্তু এর সঠিক কারণ তাদের আজানা। পূর্বের কাজের ভিত্তিতে তারা অনুমান করেন যে পারিবারিক এবং সামাজিক সমর্থন এবং সম্পর্ক, আধ্যাত্মিকতা এবং প্রকৃতির সাথে সংযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এটাও সম্ভব যে কারণগুলো বিভিন্ন সমাজে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে বা বিপরীতভাবে, একটি ছোটো কারণ সর্বত্র আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। গবেষকদের আশা তাদের এই জীবনবোধ আরও অনেককে সন্তুষ্ট জীবনযাপন করতে সাহায্য করতে পারে।