মানুষের মস্তিষ্কের মতো ত্রিমাত্রিক স্নায়বিক কলা ল্যাবে তৈরি হল

মানুষের মস্তিষ্কের মতো ত্রিমাত্রিক স্নায়বিক কলা ল্যাবে তৈরি হল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

3D বায়োপ্রিন্টিং প্রযুক্তিতে জীবন্ত কোশের সাথে বায়োইঙ্ক মিশ্রিত করে ত্রিমাত্রিকভাবে প্রিন্ট করা হয় যাতে প্রাকৃতিক টিস্যুর মতো ত্রিমাত্রিক কাঠামো তৈরি করা হয়। বর্তমানে, এই প্রযুক্তিটি বিভিন্ন গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যেমন টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নতুন ওষুধের গবেষণাতে। এই প্রযুক্তিতে যেমন প্রতিলিপির টিস্যু তৈরি করা যায়, তেমন কিছু ক্ষেত্রে আসল অঙ্গও প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। স্বাস্থ্য এবং রোগ সম্বন্ধে জানার জন্য মানব মস্তিষ্কের নেটওয়ার্ক বোঝা প্রয়োজন। এরজন্য জীবন্ত মানুষের স্নায়ুকলার একটা নির্ভরযোগ্য মডেল থাকা প্রয়োজন, কারণ অন্যান্য প্রাণীর মডেলগুলো মানব মস্তিষ্কের জটিলতা সম্পূর্ণরূপে প্রতিলিপি করতে পারে না। কিন্তু কার্যকরী মানব মস্তিষ্কের টিস্যু মুদ্রণ করা চ্যালেঞ্জিং, বেশিরভাগ 3D-মুদ্রিত টিস্যু কোশের মধ্যে সঠিক সংযোগের অভাব থেকে যায়। মডেল এমন হওয়া প্রয়োজনীয় যাখানে টিস্যুর গঠন অক্ষত রেখে নিউরনগুলিকে পরিপূর্ণ হতে হবে আর টিস্যু সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অ্যাস্ট্রোসাইটের মতো অপরিহার্য সহায়ক কোশ থাকবে।
মস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক মডেল বানানোর আগের প্রচেষ্টায় অ-বায়োডিগ্রেডেবল স্ক্যাফোল্ড ব্যবহার করা হয়েছিল যা স্নায়ু কোশকে সহজে স্থানান্তরিত হতে বাধা দেয়। স্বাভাবিক উল্লম্ব স্তরের পরিবর্তে, দলটি পূর্ববর্তী পদ্ধতির বদলে নিউরনের অনুভূমিক স্তর তৈরি করে প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল থেকে তৈরি নরম ‘বায়ো-ইঙ্ক’ জেলে স্থাপন করেছেন। গবেষকদের মুদ্রিত টিস্যু কোশগুলি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্তরগুলোর মাঝে, বা স্তরের মধ্যে মস্তিষ্কের মতো নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। এখানে নিউরন নিউরোট্রান্সমিটার ব্যবহার করে যোগাযোগ করেছে, সংকেত পাঠিয়েছে, অতিরিক্ত সহায়ক কোশের সাথে নেটওয়ার্ক গঠন করেছে। এক্ষেত্রে দেখা গেছে টিস্যুকে একসাথে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট কাঠামো রয়েছে আর এটা যথেষ্ট নরম যাতে নিউরনগুলি একে অপরের মধ্যে বৃদ্ধি পেতে পারে আর একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। যখন তারা মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন কোশ প্রিন্ট করেছেন, তখনও নিউরনগুলো একে অপরের সাথে বিশেষ এবং নির্দিষ্ট উপায়ে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছিল। সেরিব্রাল কর্টেক্স এবং স্ট্রিয়াটাম মুদ্রণ করে তারা দেখেছেন যে মুদ্রিত মস্তিষ্কের টিস্যুতে অ্যাক্সনগুলো মানুষের মস্তিষ্কের প্যাটার্নের প্রতিবিম্ব গঠন করেছে। ল্যাবে তৈরি ক্ষুদ্রাকৃতি ব্রেন অর্গানয়েড-এর তুলনায় এই 3D-প্রিন্টিং পদ্ধতি নির্ভুলভাবে কোশের ধরন এবং বিন্যাসের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রোটোটাইপ পরিপূর্ণ নিউরনের দিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, এবং মুদ্রিত টিস্যুতে মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক অর্গানয়েডগুলোর গঠনের অভাব থাকে। সেল স্টেম সেল – এ প্রকাশিত গবেষণায় গবেষকরা জানিয়েছেন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মস্তিষ্ক অধ্যয়নের জন্য এটা যথেষ্ট কার্যকর।