পার্বত্য এলাকার মানুষের জিনের মিউটেশন সমুদ্রের গভীরে জীবন্ত জীবাশ্মেও দেখা যায়

পার্বত্য এলাকার মানুষের জিনের মিউটেশন সমুদ্রের গভীরে জীবন্ত জীবাশ্মেও দেখা যায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

পাহাড়ে সমতলভূমির মানুষের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, হাঁটা চলায় অসুবিধা ঘটে, কিন্তু পাহাড়ী মানুষরা সেই পরিবেশে স্বচ্ছন্দ। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পেরুভিয়ান আন্দিজের আদিবাসী কেচুয়াদের একটা গোষ্ঠীতে EPAS1 জিনে জেনেটিক মিউটেশন শনাক্ত করেছেন। এই মিউটেশন রক্তে অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। গবেষণায় মানব কোশ কীভাবে কম অক্সিজেনে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা নিয়ন্ত্রণে EPAS1-এর গুরুত্ব তুলে ধরে, যা মানুষের মধ্যে অভিসারী বিবর্তনের উদাহরণ।
দীর্ঘ সময়ে উচ্চতায় থাকলে, কম অক্সিজেন পরিবেশে উন্মুক্ত হওয়াতে ক্রনিক মাউন্টেন সিকনেস (সিএমএস) নামক রোগ হয়, যাতে লোহিত রক্তকণিকা অত্যধিক উৎপাদন হতে পারে। আগে দেখা গেছে তিব্বতের উচ্চভূমিতে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের লাল রক্তকণিকার তুলনায় কম। এটি যেমন সিএমএস প্রতিরোধে সাহায্য করে তেমন উচ্চ উচ্চতায় ব্যায়াম করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আন্দিয়ান হাইল্যান্ডের কিছু ব্যক্তি উচ্চ উচ্চতায় কোনো অসুবিধা বোধ করেন না আবার কিছু ব্যক্তির মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার জটিলতা, যেমন পালমোনারি হাইপারটেনশন এবং হার্ট ফেলিওর দেখা যায়। জিনোমিক ডেটাতে, গবেষকরা আন্দিয়ানে কম অক্সিজেন সহনশীলতার সাথে যুক্ত EPAS1 জিনের খোঁজ পেয়েছেন যা তিব্বতের জনসংখ্যার মধ্যেও পাওয়া যায়। আন্দিয়ান এবং তিব্বতি জনসংখ্যার ক্ষেত্রে EPAS1-এর মিউটেশন, এর কার্যকলাপকে সীমিত করে এবং হাইপোক্সিয়া সম্পর্কিত প্রোটিনের উৎপাদন পরিবর্তন করে। হাইপোক্সিয়া হল এমন একটি অবস্থা যেখানে জীবের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য টিস্যু স্তরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পাওয়া যায় না। এর মানে হল EPAS1 কার্যকলাপের এই পরিবর্তন পালমোনারি হাইপারটেনশন এবং হার্টের টিস্যু পুরু হওয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষামূলক হতে পারে।
আন্দিয়ান এবং তিব্বতি জনসংখ্যার মধ্যে পাওয়া EPAS1 জিনের ভিন্ন উৎস। তিব্বতিরা সম্ভবত ৪৮০০০ বছরেরও আগে ডেনিসোভান পূর্বপুরুষ থেকে তাদের EPAS1 জিনটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। আন্দিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে এই জিন প্রায় ১০০০০ বছর আগে এসেছে। এই জিন তিব্বতিদের মধ্যে যতটা পাওয়া যায় আন্দিয়ানে তার চেয়ে কম পাওয়া যায়। যেহেতু আন্দিয়ানে জিন অনেক পরে এসেছে তাই গবেষকদের অনুমান এটা প্রাথমিক পর্যায়ে জেনেটিক নির্বাচনের অধীনে রয়েছে। মানবের মধ্যে অভিসারী বিবর্তনের কিছু উদাহরণ রয়েছে, যেমন কিছু ব্যক্তি ল্যাকটোজ হজম করার ক্ষমতা রাখেন। সাইমনসন এবং তার দল দেখেছেন, মানব জিনের EPAS1 জিনের আন্দিয়ান বৈকল্পিক অন্যান্য প্রাণীতে পাওয়া যেতে পারে। যেমন জীবন্ত জীবাশ্ম কোয়েলক্যান্থ, গভীর-সমুদ্রে বসবাসকারী একটি মাছ, এরা কম অক্সিজেন পরিবেশে বেড়ে ওঠে এবং ৪০০ মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তনের সময় মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 2 =