ফলের মাছির ঘ্রাণ রহস্য উন্মোচন

ফলের মাছির ঘ্রাণ রহস্য উন্মোচন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

ড্রোসোফিলা মেলানোগাস্টার, সাধারণভাবে ফলের মাছি নামে পরিচিত, জৈব চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য এই প্রাণী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ড্রোসোফিলায় মাত্র চার জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে যা অধ্যয়ন করা সহজ, তার সাথে এর জিনোম মানব জিনোমের সাথে উল্লেখযোগ্য সমতুল্য যা নির্দিষ্ট জিনের অধ্যয়নকে সহজ করে তোলে। নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা ফলের মাছির ইন্দ্রিয়ের বিবর্তনকে উন্মোচন করেছে। মাছিদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় এবং জিভের জিন এবং কোশ অনুসন্ধান করে, গবেষকরা এই ক্ষুদ্র পোকামাকড়গুলো কীভাবে তাদের ইন্দ্রিয়গুলো বিভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নেয় সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স, জিনোমিক্স এবং ফান্ডামেন্টাল সেল বায়োলজির গবেষকরা ছটি বিভিন্ন ড্রসোফিলা প্রজাতির পাঁচটা মূল ঘ্রাণ-সনাক্তকারী কলাতে জিনের অভিব্যক্তির ধরণ বিশ্লেষণ করেছেন। তারা জিনের “stabilizing selection,” আবিষ্কার করেছেন, এই স্থিতিশীল নির্বাচন এমন এক শক্তি যা বেশিরভাগ জিনকে প্রজন্ম জুড়ে একই স্তরে প্রকাশ করে।কিন্তু এই স্থিতিশীলতার মাঝেও তারা এমন হাজার হাজার জিন খুঁজে পেয়েছেন যাদের অভিব্যক্তিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে, ফলে বিভিন্ন প্রজাতির ড্রসোফিলাতে নানা ধরনের ঘ্রাণেন্দ্রিয় অলফ্যাক্টরি তৈরি হয়েছে। তাই একই ফলের গন্ধ, বিভিন্ন প্রজাতির ড্রসোফিলার কাছে আলাদা গন্ধ বয়ে নিয়ে আসে। জিনের অভিব্যক্তিতে পরিবর্তন নতুন গন্ধ, নতুন সংবেদনশীলতা এমনকি নানা স্থানের অবস্থান বোঝার জন্য তাদের ঘ্রাণ ব্যবহার করার নতুন নতুন উপায়ে বিবর্তন সম্পর্কে জানায়।
এই গবেষণায় মাছিদের লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্যও বোঝা গেছে, স্ত্রী ও পুরুষ ফলের মাছি অন্যান্য অনেক প্রাণীর মতো, ঘ্রাণেন্দ্রিয়র মাধ্যমে বিশ্বকে অনুভব করে। তবে তাদের স্ত্রী পুরুষ ভেদে এই ঘ্রাণেন্দ্রিয় ভিন্ন ভিন্ন হয়। গবেষকরা ডি. মেলানোগাস্টারের সামনের পায়ে পুরুষ-পক্ষপাতমূলক জিনের অভিব্যক্তির আধিক্য চিহ্নিত করেছেন, তিনি জানিয়েছেন, এই অঙ্গগুলি পুরুষের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঘ্রাণ সনাক্তকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই গবেষণার ফলাফল কীভাবে লিঙ্গের নানা পার্থক্য বিকশিত হয় এবং কীভাবে তারা প্রাণীদের আচরণকে প্রভাবিত করে তা বোঝার জন্য কার্যকর। এই অধ্যয়ন মাছিদের জগতের বাইরেও প্রসারিত। কীভাবে সংবেদনশীল সিস্টেমগুলি প্রাণীতে বিকশিত হয় তার সম্পর্কে জানায়। মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীরা কীভাবে তাদের রাসায়নিক পরিবেশকে উপলব্ধি করে তাও বুঝতে সাহায্য করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + 3 =