দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অধিক প্রাণীজ প্রোটিন শরীরের বিপদ ডেকে আনে

দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অধিক প্রাণীজ প্রোটিন শরীরের বিপদ ডেকে আনে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ মার্চ, ২০২৪

মানুষ যত খাদ্য নিয়ে সচেতন হচ্ছেন তত দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ভাত, ডাল, সবজি, রুটির পাশে মাছ, মাংস, ডিম দুধের চাহিদা বাড়ছে। শরীর গঠনে প্রোটিনের ভূমিকা থাকাতে নানা ধরনের প্রাণীজ প্রোটিন বেশিরভাগ মানুষ গ্রহণ করেন। উন্নত দেশে দৈনন্দিন প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ আরও বেশি। কিন্তু গবেষকরা জানাচ্ছেন বেশি প্রাণীজ প্রোটিন হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্যের বিপদ ডেকে আনে।
ল্যাবে পেট্রি ডিশে ইঁদুর এবং কোশের ওপর পরীক্ষায়, আর ছোটোস্কেলে মানুষের ওপর ট্রায়াল থেকে গবেষকরা জানাচ্ছেন খাদ্যতালিকায় ২২%-এর বেশি ক্যালোরি প্রোটিন থেকে গ্রহণ করলে ইমিউন কোশের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে পারে। এই কোশ এথেরোস্ক্লেরোটিক প্লেক গঠনে ভূমিকা নেয়। এথেরোস্ক্লেরোসিসে ধমনীর দেয়ালের ওপর চর্বি, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থ জমা হয়। এই গঠনকে প্লেক বলা হয়। ফলে ধমনী সংকীর্ণ হয়ে, রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। প্লেক ফেটে গিয়ে ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন লিউসিন নামে অ্যামিনো অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিসে ধমনীর দেয়াল পুরু করে তার স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করার জন্য দায়ী। ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবার্গ স্কুল অফ মেডিসিন-এর গবেষকরা নেচার মেটাবলিজম-এ এথেরোস্ক্লেরোসিসে প্রোটিনের ভূমিকার ওপর এই গবেষণা প্রকাশিত করেছেন।
ল্যাবে, ইঁদুর ও মানুষের ওপর আণবিক স্তরের গবেষণায় তারা জানিয়েছেন প্রোটিনের বিল্ডিং ব্লক অ্যামিনো অ্যাসিড, নির্দিষ্ট সংকেত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগের সূত্রপাত করতে পারে এবং তারপরে এই কোশগুলোর বিপাককেও পরিবর্তন করতে পারে। ম্যাক্রোফাজ নামক রক্ত সংবহনতন্ত্রে উপস্থিত ছোটো ইমিউন কোশ এথেরোস্ক্লেরোসিসের তৈরি হওয়া ট্রিগার করতে পারে। মানুষের রক্তে উপস্থিত ম্যাক্রোফাজ প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা দেয়, পাশাপাশি পুরানো, জরাগ্রস্ত বা মৃত কোশ অপসারণের কাজ করে। দৈনিক খাদ্যতালিকাগত ক্যালোরির ২২% এর বেশি প্রোটিন থেকে গ্রহণ করলে ম্যাক্রোফাজগুলো নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। ম্যাক্রোফাজ কোশের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করার জন্য দায়ী হলেও তারা ধমনীর দেয়ালে মৃত কোশ জমা করতে থাকে ফলে এথেরোস্ক্লেরোটিক প্লেক গঠন আরও বেশি পরিমাণে হতে থাকে। দেখা গেছে গরুর মাংস, ডিম এবং দুধের মতো প্রাণী থেকে প্রাপ্ত খাবারে লিউসিন সমৃদ্ধ অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। এটা প্রাথমিকভাবে অস্বাভাবিক ম্যাক্রোফাজ সক্রিয়করণ এবং এথেরোস্ক্লেরোসিসের ঝুঁকির জন্য দায়ী। এই গবেষণা প্রোটিনের ওপর অত্যধিক জোর না দিয়ে সঠিক মাত্রায় পুষ্টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে বলছে। অসুস্থ, বয়স্ক রোগী যারা হসপিটালে ভর্তি তাদের রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য প্রোটিন বেশি গ্রহণ করতে বলা হয়, কিন্তু তাদের হার্ট ও শারীরিক ঝুঁকি মাথায় রেখে ডায়েট ঠিক হওয়া দরকার। আর ডায়েটে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন অন্তর্গত করা যেতে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + fifteen =