ADHD ও যাযাবরবৃত্তির যোগসূত্র

ADHD ও যাযাবরবৃত্তির যোগসূত্র

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ মার্চ, ২০২৪

ADHD বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার মূলত মনোযোগের ঘাটতি, যা শৈশবের খুব সাধারণ নিউরোডেভেলপমেন্টাল ব্যাধিগুলির মধ্যে একটা। এটি সাধারণত শৈশবে নির্ণয় করা যায় এবং প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় স্থায়ী হয়। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের মনোযোগ দিতে, আবেগপ্রবণ আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হতে পারে, এরা ফলাফল কী হবে তা না ভেবেই কাজ করা বা অতিরিক্ত সক্রিয় হওয়া দেখা যায়।
একটি নতুন পরীক্ষায়, গবেষকরা দেখেছেন যে মনোযোগের ঘাটতি, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার যাদের আছে সেইসব ব্যক্তিদের কোনো কিছু খোঁজা বা চারণের কৌশল অন্যান্য ব্যক্তিদের তুলনায় ভালো। গবেষকদের অনুমান ADHD বেঁচে থাকার জন্য মানুষের একটা অভিযোজিত কৌশল হিসেবে বিকশিত হয়েছে। এতে একই জায়গায় সম্পদ শোষণে মস্তিষ্ক বাধা দেয় এবং পরিবর্তে নতুন জায়গা অনুসন্ধান করতে বলে। তাদের মতে অভিযোজনের কৌশল হওয়ার জন্য আজ মানব জাতির মধ্যে ADHD এতটা বিস্তার লাভ করেছে, যাতে বিশ্বব্যাপী কয়েক মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত।
ইউনিভার্সিটি অফ পেনেসিলভেনিয়ার নিউরোসায়েন্টিস্টরা ৪৫৭জন অংশগ্রহণকারী নিয়ে তাদের সীমিত সময়ের মধ্যে কম্পিউটার স্ক্রিনে ভার্চুয়াল ঝোপ থেকে বেরি বাছাই করতে দিয়েছেন। একজন অংশগ্রহণকারী বেরির ঝোপে ক্লিক করে, ভার্চুয়াল গুল্ম থেকে বেরি বাছতে পারেন। তারপরে ব্যক্তিদের পছন্দ করতে দেওয়া হয়েছিল- একই ঝোপে থাকে বেরি সংগ্রহ করতে পারেন অথবা খেলার মূল্যবান সময় ব্যয় করে নতুন ঝোপে গিয়ে বেরি খুঁজতে হবে, যেখানে বেশি বেরি পাওয়া যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, স্ক্রিনে নতুন বেরির ঝোপ খুঁজতে মাত্র এক সেকেন্ড সময় লেগেছে, কোথাও এতে ৫ সেকেন্ড সময় লেগেছে। যাদের ADHD নেই তারা একটা ঝোপে মন দিয়ে থেকে যতটা সম্ভব বেরি সংগ্রহ করেছেন, কিন্তু ADHD-এর লক্ষণ যাদের মধ্যে ছিল, তারা নানা বেরি ঝোপ খুঁজে পরীক্ষার শেষে বেশি বেরি সংগ্রহ করেছেন। এর আগেও গবেষণায় বলা হয়েছে, যাযাবর জীবনযাত্রা থেকে যে জিনগত মিউটেশন হয়েছে, তার সাথে ADHD-এর সম্পর্ক আছে। কিন্তু বহু পূর্বে যাযাবর আচরণের ক্ষেত্রে এই জিন সফল হলেও বর্তমানে প্রচুর সম্পদ যা অবিরত সহজেই পাওয়া যায় সেখানে ADHD কিন্তু মোটেও উপকারী নয়। ক্রমাগত পুরস্কার-সন্ধানী আচরণ, মস্তিষ্কের পুরস্কার কেন্দ্রগুলোতে ডোপামিনের পথ ঠিকমতো কাজ করে না ইতিবাচক প্রেরণা তৈরি হয় না, বিরূপ আচরণ ও সতর্ক করার সিগন্যাল আসে না, ফলে ADHD-এ আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোনো কাজ সম্পূর্ণ না করেই এক কাজ থেকে আরেক কাজে চলে যেতে থাকে। এই ফলাফল বলছে নির্দিষ্ট নিউরাল সার্কিট কোনোভাবে ‘অন্বেষণ বনাম শোষণ’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মস্তিষ্ককে চালিত করে। কিন্তু বর্তমান জগতের পক্ষে ADHD নেতিবাচক। এই গবেষণা প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি- তে প্রকাশিত হয়েছে।