গন্ধ শুঁকলেও জিনের অভিব্যক্তির পরিবর্তন হতে পারে

গন্ধ শুঁকলেও জিনের অভিব্যক্তির পরিবর্তন হতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ মার্চ, ২০২৪

কিছু নির্দিষ্ট খাবারের গন্ধও নাকি আমাদের জিনের অভিব্যক্তি প্রকাশ পরিবর্তন করতে পারে। এমনটাই জানিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন ফল বেশি পেকে গিয়ে মজে গেলে অথবা ফার্মেন্টেড খাবার মানে যে খাবার মজে গেছে তার থেকে যে গন্ধ নির্গত হয়, তা নাকের ভেতরের কোশের জিনের অভিব্যক্তি প্রকাশে পরিবর্তন আনতে পারে। বিজ্ঞানীদের অনুমান উদ্বায়ী, বায়ুবাহিত এই যৌগগুলো শুঁকলে ক্যান্সারের চিকিৎসার উপায় বা নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ ধীর হতে পারে। রিভারসাইড, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোশ এবং আণবিক জীববিজ্ঞানী বলেছেন গন্ধের সংস্পর্শ সরাসরি জিনের অভিব্যক্তিকে পরিবর্তন করতে পারে। কোনও গন্ধযুক্ত রিসেপ্টর নেই এমন কলাতেও এই পরিবর্তন দেখা যায়। যদিও এ বিষয়ে অন্যান্য গবেষকদের কিছু মতামত আছে।
মজা ফল থেকে ইস্ট ডাইঅ্যাসেটাইল নামে একটা উদ্বায়ী যৌগ নির্গত করে । এটা পপকর্নের মতো খাবারে মাখনের মতো সুগন্ধ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে, কখনও কখনও ই-সিগারেটেও এটা পাওয়া যায়। গবেষকরা ফলের মাছি ড্রসোফিলা মেলানোগাস্টার এবং ইঁদুরকে ৫ দিন ধরে বিভিন্ন মাত্রায় ডাইঅ্যাসেটাইল বাষ্পের সংস্পর্শে এনেছিলেন। তারা গবেষণাগারে তৈরি মানব কোশে দেখেছেন ডাইঅ্যাসেটাইল হিস্টোন ডিঅ্যাসিটাইলেজ (এইচডিএসি) বাধা হিসেবে কাজ করতে পারে। এটা প্রাণীদের মস্তিষ্ক, ইঁদুরের ফুসফুস এবং মাছির অ্যান্টেনার কোশ সহ মাছি এবং ইঁদুরের জিনের অভিব্যক্তিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায়। এইচডিএসি উৎসেচক ডিএনএ-কে হিস্টোনের চারপাশে চেপে জড়িয়ে রাখতে সাহায্য করে, এই উৎসেচক যদি বাধাপ্রাপ্ত হয় তবে জিনের অভিব্যক্তি সহজেই প্রকাশ পায়। রক্তের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য এইচডিএসি-র বাধা পূর্ব থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
গবেষকরা দেখেছেন, ডাইঅ্যাসেটাইল বাষ্প মানব কোশে নিউরোব্লাস্টোমা কোশের বৃদ্ধি আটকে দিচ্ছে। তবে বিভিন্ন গবেষকদের মতে মানুষ ডাইঅ্যাসেটাইল বাষ্পের গন্ধে উন্মুক্ত হলে অবলিটারেটিভ ব্রঙ্কিওলাইটিস নামে ফুসফুসের রোগ হতে পারে। তাছাড়া এই গবেষণা থেকে এখনও স্পষ্ট নয়, গন্ধ কীভাবে এপিজেনেটিক পরিবর্তন আনছে। তাই মানুষের বদলে তারা এই কাজের প্রয়োগ কৃষিক্ষেত্রে করতে চান, কারণ গাছেও এচডিএসি উৎসেচক আছে। অন্যান্য গবেষণা থেকে দেখা গেছে গাছ বাতাসে উদ্বায়ী যৌগে আকস্মিক তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, তাদের গবেষণার মূল বক্তব্য হল অণুজীব বা খাবারের কিছু উদ্বায়ী পদার্থ নিউরন ও ইউক্যারিয়টিক কোশে এপিজেনেটিক পরিবর্তন ঘটায়। বর্তমানে মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব, যা মানবকোশের পর্দা অতিক্রম করে গেলেও তা মানুষের জন্য নিরাপদ হবে এরকম উদ্বায়ী যৌগ চিহ্নিত করার জন্য তারা কাজ করছেন। তাদের গবেষণা ই-লাইফে প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − 5 =