গন্ধ শুঁকে মানুষের আনন্দ বা ভয় পাওয়া অন্য প্রাণী বুঝতে পারে?

গন্ধ শুঁকে মানুষের আনন্দ বা ভয় পাওয়া অন্য প্রাণী বুঝতে পারে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ মার্চ, ২০২৪

মানুষ যখন আনন্দ পায় তখন তার শরীরে যে ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়, ভয় পেলেও কি সেই একইরকম রাসায়নিক নির্গমন হয়? সেই গন্ধ শুঁকে অন্য প্রাণীদের প্রতিক্রিয়া কিরকম হয়? এ বিষয়ে জানার জন্য ঘোড়া এবং কুকুর সহ প্রাণীরা কীভাবে আনন্দিত আর ভয়ার্ত মানুষের নির্গত গন্ধে সাড়া দেয় গবেষকরা তা দেখতে চেয়েছেন। এই গবেষণায় তারা সরাসরি মানুষকে যুক্ত করেননি, কারণ কুকুর মানুষের আচরণে, শারীরিক ছন্দে অভ্যস্ত, তারা সহজেই তাতে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানায়। সায়েন্টিফিক রিপোর্ট জার্নালে ঘোড়া নিয়ে প্রকাশিত গবেষণায়, গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের একদিন একটা মজার কমেডি সিনেমার অংশ দেখতে দিয়েছিলেন এবং পরের দিন একটা ভয়ের সিনেমার অংশ দেখিয়েছিলেন। প্রতিটা ভিডিও দেখার পর, গবেষকরা সুতির প্যাড ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীরদের বাহুমূল থেকে ঘামের নমুনা সংগ্রহ করেন। অংশগ্রহণকারীরা প্রতিটা সিনেমার অংশ দেখার সময় কতটা আনন্দ বা ভয় অনুভব করেন তার রিপোর্ট গবেষকরা নেন। তারপরে, গবেষকরা একই মানুষের কাছ থেকে নেওয়া দুটো সোয়াব নমুনা নির্দিষ্ট ঘোড়াদের কাছে উপস্থাপন করে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন, যে ঘোড়া সুখ বা দুঃখের সময় মানুষের থেকে যে গন্ধ উত্পাদিত হয় তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে কিনা।
ফ্রান্সের ট্যুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট ছাত্র প্লটিন জারদাত জানিয়েছেন ঘোড়াগুলোকে কোন সুতির প্যাড দেওয়া হয়েছিল, তার ভিত্তিতে তারা আলাদা আলাদা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। যখন আনন্দের নমুনার গন্ধ শুঁকেছিল, তখন ঘোড়ারা তাদের বাম নাসারন্ধ্র ব্যবহার করেছিল। গবেষকের মতে এর থেকে বোঝা যায় ঘোড়ারা গন্ধ বিশ্লেষণ করার জন্য মস্তিষ্কের কোন অংশ ব্যবহার করছে৷ সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মস্তিষ্কের দুটো গোলার্ধের কাজ আলাদা। তার মতে আনন্দের নমুনার গন্ধ ঘোড়াদের কাছে ইতিবাচক হিসাবে অনুভূত হয়েছিল৷ কিন্তু ঘোড়াগুলোকে যখন ভয়ের সময়ের ঘামের নমুনার তুলো শুঁকতে দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা দুটো নাসারন্ধ্র ব্যবহার করে অনেকক্ষণ ধরে গন্ধ শুঁকেছিল, তাদের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ছিল। এর থেকে ঘোড়ারা ‘ভয়’ বিষয়টা বুঝতে না পারলেও মানুষের বিভিন্ন মানসিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গন্ধ আলাদা করতে পারছে তা বোঝা যাচ্ছে।
প্রশ্ন হল মানুষের ঘামে কোন নির্দিষ্ট যৌগ উৎপন্ন হয় যাতে ঘোড়ার পরিবর্তিত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়? গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রাণীদের দ্বারা উত্পাদিত রাসায়নিক কেমোসিগন্যাল, অন্য প্রাণীর আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে। এর জন্যই হয়তো ঘোড়ার ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মানুষের ঘামে যেমন অ্যাড্রেনালিন বা অ্যান্ড্রোস্টাডিনোন (ফেরোমোনের মতো প্রোটিন) এরকম কিছু যৌগ থাকে, যা ভয়ের মুহুর্তে গন্ধের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। কুকুরের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে কোনো অচেনা লোকের থেকে নেওয়া আনন্দের ও ভয়ের ঘামের নমুনায় তারা আলাদাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। গবেষকদের মতে এই যৌগগুলো এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে “আবেগ সংক্রান্ত তথ্য” বহন করতে পারে। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা হল ভয়ের গন্ধ ঘোড়ার মধ্যে ভয়ের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে কিনা এবং নমুনার গন্ধ শোঁকার পরে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করার মাধ্যমে প্রাণীদের উপর আবেগগতভাবে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা পরীক্ষা করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + 3 =