শহুরে মানুষের উদ্ভিদজাত খাদ্য হজম করার ক্ষমতা কমছে

শহুরে মানুষের উদ্ভিদজাত খাদ্য হজম করার ক্ষমতা কমছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ মার্চ, ২০২৪

আমরা নানারকম ফল, সবজি খেলেও শহুরে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ফাইবার আছে এমন খাদ্য ক্রমশ কমছে। কিন্তু তাতে কী মানুষের স্বাস্থ্যে বিশেষ কোনো প্রভাব পড়ছে? সেলুলোজ উপস্থিত এমন খাদ্য যেমন উদ্ভিদ ফাইবার, অন্ত্রের জীবাণুর পরিবর্তন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, জিনের অভিব্যক্তি সহ স্বাস্থ্যের একাধিক উপকার করতে পারে। আগে ভাবা হত তৃণভোজী প্রাণী গরু, ছাগল, ভেড়া যেভাবে সেলুলোজ পরিপাক করতে পারে, মানুষ তা পারে না। বিজ্ঞানীরা উদ্ভিদ কোশপ্রাচীরে অবস্থিত সেলুলোজ, যা সাধারণত পরিপাক করা যায় না বলে ধারণা ছিল তা মানুষের পাচনতন্ত্রে কীভাবে ভাঙে সে বিষয়ে গবেষণা করেছেন। ২০০৩ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল, অন্ত্রে উপস্থিত এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ফাইবার, যা মূলত সেলুলোজজাত তন্তু তা পরিপাক করতে সক্ষম। মানুষের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মলের নমুনা ব্যবহার করে গবেষকরা বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা গেছে, তৃণভোজী প্রাণীদের সাথে আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার বেশ মিল রয়েছে। ব্যাকটেরিয়ার এক প্রজাতি খুর আছে জাবর কাটে এমন স্তন্যপায়ী প্রাণীর অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সাথে সম্পর্কিত, আর এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি প্রাইমেটে পাওয়া যায়, অন্য এক ধরনের প্রজাতি মানুষের অন্ত্রে পাওয়া গেছে ।
এই তিনটে ব্যাকটেরিয়াই রুমিনোকক্কাস প্রজাতির অন্তর্গত, যা সুস্থ বা অসুস্থ মানুষের অন্ত্রে পাওয়া গেছে। এদের সেলুলোজ পরিপাকের জিন রয়েছে। বিবর্তনের ধারা থেকে বোঝা যায়, রুমিনোক্ককাস ব্যাকটেরিয়া পশু পালনের সময় গরু, মোষ, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি তৃণভোজী প্রাণীর থেকে মানুষের অন্ত্রে এসেছিল। আদিম যুগে মানুষ যখন শিকার করত বা বনের কাঁচা ফল-মূল সংগ্রহ করে খেত তাদের ক্ষেত্রে এই অনুজীবগুলো প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেছে। ১০০০ থেকে ২০০০ বছর আগে বসবাসকারী প্রাচীন মানুষের বা গ্রামীণ এলাকার মানুষের মলের নমুনায় এই তিন ধরনের অণুজীব প্রচুর পাওয়া গেছে। কিন্তু আধুনিক, শিল্পোন্নত সমাজের জনসংখ্যার মধ্যে, এই অন্ত্রের জীবাণুগুলো ‘স্পষ্টতই বিরল’ বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
ইস্রায়েলের বেন-গুরিয়ন ইউনিভার্সিটি অফ নেগেভের মাইক্রোবায়োলজিস্ট সারাহ মোরাইস, গবেষণার লেখক, এই ফলাফল থেকে জানিয়েছেন, মানুষের অন্ত্রে এই প্রজাতির হ্রাস সম্ভবত পশ্চিমী জীবনধারার প্রভাবে ঘটেছে। তার ব্যাখ্যা হল, রুমিনোকোকাস জীবাণুগুলো উদ্ভিদের ফাইবার থেকে ক্রমশ বঞ্চিত হওয়ার ফলে অন্ত্রে তাদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই অনুপস্থিত ব্যাকটেরিয়া প্রজাতিগুলোর অভাব আধুনিক, নগরায়ন সভ্যতার আওতায় বেড়ে ওঠা মানুষের দুর্বল বিপাকীয় স্বাস্থ্যের জন্য দায়ী হতে পারে। গবেষণার লেখকরা মনে করেন খাদ্যতালিকাগত সম্পূরক বা বিশেষ প্রোবায়োটিকের মাধ্যমে মানুষের অন্ত্রে এই প্রজাতির পুনঃপ্রবর্তন বা সমৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকতে পারে। অন্যান্য কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে যে শিল্পোন্নত সমাজের খাদ্যে উদ্ভিজ্জ ফাইবার গ্রহণ খুব কম, যার ফলে মানব স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমান গবেষণা ঐতিহাসিকভাবে মানুষের অন্ত্রে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষণা সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।