আমাদের শরীর বহিরাগত প্যাথোজেন ও শরীরের নিজস্ব রসায়নিক বস্তু শনাক্ত করতে ভারি পটু। যখন শরীরের এই কাজ করতে অসুবিধা হয়, তখনই শরীর জুড়ে শুরু হয় জীবাণুর আক্রমণ। বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে বুঝতে গিয়ে কোশের একটা নতুন ‘সুইচ’ শনাক্ত করেছেন, যা বিদেশি ডিএনএ -র সেন্সর নিষ্ক্রিয় করে। সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি লসানের একদল গবেষক, সাইক্লিক জিএমপি-এএমপি সিন্থেস (cGAS) নামক একটা এনজাইম শনাক্ত করেছেন। এই প্রোটিনটা অনুপ্রবেশকারী ভাইরাস শনাক্ত করে, কোশের সাইটোপ্লাজমের চটচটে স্থানের বাইরে ভাসমান যে কোনও বিদেশী ডিএনএর সাথে আবদ্ধ হয় এবং শরীরকে সতর্ক করে আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া শুরু করে। cGAS -এর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন পড়ে, বিশেষ করে তা যখন কোশের নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে, তা নাহলে cGAS শরীরের কোশকে মেরে ফেলে। অটোইমিউন ডিসঅর্ডার, যেমন টাইপ 1 ডায়াবেটিস এবং অন্ত্রের প্রদাহ বা IBS-এ ইমিউন সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণগুলো ঠিকভাবে কাজ করে না। নেচারে প্রকাশিত এই গবেষণায় জানানো হয়েছে, যেখানে কোনো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রয়োজন নেই , সেই স্থানে এই এনজাইম মুছে ফেলার জন্য কোশের একটা জৈবিক সুইচ চিহ্নিত করা হয়েছে। এই গবেষণায় কোশীয় স্তরে cGAS -এর নিয়ন্ত্রণ কীভাবে হয় তা অনুসন্ধান করে বোঝা গেছে।
বিজ্ঞানীরা প্রতিষ্ঠা করেছেন যে কোশ বৃদ্ধির সময় বিভক্ত হওয়ার সময়, নিউক্লিয়ার পর্দা দ্রবীভূত হয়ে যায়, ফলে cGAS সহজেই ডিএনএ-র কাছে পৌঁছে যায়। সেখানে, cGAS নিউক্লিওসোম নামক ডিএনএ প্যাকেজিং ইউনিটের সাথে আবদ্ধ হয়ে বিএএফ নামক একটি প্রোটিন দ্বারা আবৃত হয়ে কখন তার প্রয়োজন পড়বে তার জন্য অপেক্ষা করে। এই গবেষণায়, ল্যাবে তৈরি কোশের বিশদ বিশ্লেষণে CRL5–SPSB3 নামে একটি প্রোটিন কমপ্লেক্স শনাক্ত করা গেছে। এটা cGAS-কে বাতিল হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য ubiquitin নামক একটি রাসায়নিক যোগ করে। যখন আর cGAS – এর প্রয়োজন পড়ে না অর্থাৎ যখন বিদেশি ডিএনএ-এর কোনো ঝুঁকি থাকে না, তখন এই প্রধান সুইচ cGAS -কে মেরে ফেলে। কারণ cGAS এনজাইম সুস্থ কোশগুলোও আক্রমণ করে মেরে ফেলে। তাই এই প্রোটিন CRL5–SPSB3, cGASকে কোশ থেকে সরিয়ে দেয়। ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এমন সংকেতের অংশকে ইন্টারফেরন বা IFN পাথওয়ে বলা হয়, এবং এই গবেষণা বলেছে কীভাবে cGAS এবং CRL5–SPSB3 উভয়ই, সুইচ অন ও অফ করার জন্য IFN এর সাথে জড়িত। cGAS-এর বিষয়ে জেনে, এর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য থেরাপিউটিক দিক নিয়ে কাজ করা যেতে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।