আবেগ নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্ক

আবেগ নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্ক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ এপ্রিল, ২০২৪

আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা, ভঙ্গি প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই আলাদা। কোনও কারণে কেউ প্রচণ্ড দুঃখ পেলে কেঁদে ফেলে । আবার কেউ দুঃখে-শোকে পাথর হয়ে যায়। কারো কাছ থেকে আঘাত পেলে কারও বুকের ভিতরে ব্যথা চিন চিন করে ওঠে আবার কেউ রাগে চিৎকার করতে থাকে। এ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের মস্তিষ্ক। আমরা যখন আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো উপলব্ধি করি, সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে নমনীয় রাখা বা পরিস্থিতি পুনর্বিন্যাস করার ক্ষমতা কেবল আমাদের অনুভূতিকে প্রভাবিত করেনা আমাদের আচরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে। প্রকৃতপক্ষে, মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত কিছু সমস্যা ব্যক্তিদের নমনীয় হতে দেয় না, মনে ক্রমাগত নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ভিড় করে আর পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে উপলব্ধি করা কঠিন করে তোলে। এই ধরনের সমস্যার সমাধানে এক নতুন গবেষণা আলোকপাত করেছে এবং এর ফলাফল নেচার নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় মস্তিষ্কের কিছু অঞ্চল শনাক্ত করা হয়েছে যেগুলো আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য সম্পূর্ণরূপে অনন্য। কম্পিউটেশনাল পদ্ধতি ব্যবহার করে, গবেষকরা এফএমআরআই-এর দুটি ভিন্ন ডেটাসেট পরীক্ষা করেছেন। যখন অংশগ্রহণকারীদের কিছু ভয়ংকর ছবি বা ভীতিজনক প্রাণীর ছবি দেখানো হয় তখন তাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ যা সম্পূর্ণরূপে কিছু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তা এফএমআরআই স্ক্যানারে রেকর্ড করা হয়েছিল। স্নায়বিক কার্যকলাপ পরীক্ষা করে, গবেষকরা মস্তিষ্কের সেই সব অঞ্চল শনাক্ত করে যেগুলো আবেগ তৈরি হওয়ার সময়ের তুলনায় আবেগ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার সময় আরও সক্রিয় থাকে।
নতুন এই সমীক্ষায় দেখা গেছে যে আবেগ নিয়ন্ত্রণ, বা স্নায়ুবিজ্ঞানের ভাষায় “রিঅ্যাপ্রাইজাল”, মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের অগ্রভাগ এবং অন্যান্য কর্টিকাল ক্ষেত্র জড়িত যার আবেগ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা আগে নির্ভুলতার সঙ্গে চিহ্নিত করা যায়নি। এই অঞ্চল অন্যান্য উচ্চ-স্তরের বৌদ্ধিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে যুক্ত এবং বিমূর্ত চিন্তাভাবনা এবং ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদী উপস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশি মানুষ মস্তিষ্কের এই আবেগ নিয়ন্ত্রণ-নির্বাচিত অঞ্চলগুলোকে সক্রিয় করতে সক্ষম হয়, তারা তত নেতিবাচক চিন্তাভাবনা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। গবেষকরা মনে করেন মস্তিষ্কের কর্টেক্স অঞ্চল, আমাদের পরিবেশে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং আমরা সেগুলো কীভাবে দেখি ও অর্থ সংযুক্ত করি তার ভিত্তিতে আমাদের আবেগ বা মানসিক প্রতিক্রিয়া তৈরির জন্য দায়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × two =