কমবয়সী দেখতে লাগার ইচ্ছা ও বার্ধক্যের যোগসূত্র

কমবয়সী দেখতে লাগার ইচ্ছা ও বার্ধক্যের যোগসূত্র

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ এপ্রিল, ২০২৪

সমস্ত মানুষের জীবনে বার্ধক্য অনিবার্য হলেও বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বার্ধক্য আলাদা বয়সে আলাদা রূপে আসে। বিভিন্ন কারণে বার্ধক্য ত্বরান্বিত হতে পারে, যেমন মেয়েদের গর্ভাবস্থার সময়, অতিরিক্ত মানসিক উদ্বেগে বা শারীরিক কষ্টে। সাধারণত আমরা কোনো ব্যক্তিকে দেখে তিনি কত বয়সী তা অনুমান করার চেষ্টা করি। আমাদের শরীর যেভাবে কাজ করে আর মানুষ আমাদের যেভাবে দেখে থাকে তা ভিন্ন হলেও, গবেষণা বলছে কাউকে শুধুমাত্র দেখে বা হ্যান্ডশেক করে তার সামগ্রিক স্বাস্থ্য অনুমান করা যায়, যার থেকে বয়স সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে কোনো ব্যক্তিকে এই ধারণার ভিত্তিতে তার বয়স সম্পর্কে মতামত দিলে তা তার শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ইতিবাচক বা নেতিবাচক মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে। ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী জুলি ওবার অ্যালেন এবং তার সহকর্মীদের স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যের ওপর গবেষণা বলছে, বার্ধক্য সম্পর্কে আমাদের নিজস্ব ধারণা আমাদের বার্ধক্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তারা ২০১৯ সালের জাতীয় জরিপ থেকে ৫০ থেকে ৮০ বছর বয়সী ২০০৬ জন মার্কিন প্রাপ্তবয়স্কের তথ্য নিয়েছেন।
অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, যে তারা নিজেদের সমবয়স্ক ব্যক্তিদের তুলনায় নিজেকে কতটা কমবয়স্ক বা বেশিবয়স্ক ভাবেন। ৫৯ শতাংশ ব্যক্তির ধারণা সমবয়সীদের তুলনায় তাদের কম বয়সী দেখায়। ৬ শতাংশ ব্যক্তি জানান সমবয়স্কদের তুলনায় তাদের বয়স্ক বলে মনে হয়। তাদের সমবয়সীদের তুলনায় কম বয়সী দেখায় এই ধারণা পুরুষদের তুলনায়, মহিলাদের মধ্যে বেশি। তার সাথে নিজেদের কম বয়সী দেখানোর চেষ্টা করতে তারা পুরুষদের তুলনায় বেশি সময় এবং নিজদের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করেন। বয়স্কদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা বয়স-সম্পর্কিত বৈষম্য বা প্রশংসার আকারে কোন ইতিবাচকতা অনুভব করেছেন কিনা বা তাদের বয়সজনিত অভিজ্ঞতার নিরিখে কেউ পরামর্শ চায় কিনা। এক-তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন নিজেদের তরুণ দেখাতে মূল্যবান সময় এবং কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করেও তারা নেতিবাচক মন্তব্য বা বার্ধক্য জনিত স্টিরিওটাইপের মধ্যে দিয়ে গেছেন। এই ব্যক্তিরা তাদের বয়স্ক হওয়ার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, মানুষের মনে তাদের দেখার, শোনার বা প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে যারা চেষ্টা করে নিজেদের কিছুটা কমবয়স্ক দেখাতে পেরেছেন, তারা কম বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছেন, তবে তারা নিজদের বার্ধক্যজনিত চেহারা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং অস্বস্তি বোধ করেন। আর যে সমস্ত ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো তারা বয়স-সম্পর্কিত ইতিবাচক মন্তব্য শুনেছেন। যারা বৈষম্য বা নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হয়েছিলেন তারা বলেছেন তাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ই খারাপ ছিল। এটা বেশ উদ্বেগজনক কারণ বয়স্ক মানুষের প্রতি সমাজের আচরণ বেশ লজ্জাজনক, সমাজ বয়স্ক ব্যক্তিদের এমন চোখে দেখে এমন আচরণ করে যাতে তাদের স্বাস্থ্য আরও খারাপ হতে থাকে ফলে তারা দ্রুত বয়স্ক হয়ে উঠতে থাকেন। এই গবেষণা সাইকোলজি অ্যান্ড এজিং- এ প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 2 =