আবহাওয়ার পরিবর্তন, তথা পৃথিবীর ক্রমশ গরম হয়ে পড়া, একইসঙ্গে অদূর ভবিষ্যতে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার সামগ্রিক ফলে বৈজ্ঞানিক, গবেষকরা ভীষণই আশঙ্কিত। তারা জানিয়ে দিচ্ছেন উষ্ণায়ন না কমাতে পারলে আগামীদিনে মানবসভ্যতাকে অনেক খারাপ দেখতে হবে।
এবছরের মে-তে হওয়া এক গবেষণা মানবসভ্যতাকে জানিয়ে দিল সম্ভাব্য অনেক খারাপের মধ্যে একটা ‘খুব’ খারাপের কথা। উষ্ণায়ন যেভাবে বাড়ছে তাতে আগামীদিনে আমরা আমাদের দৈনন্দিন খাবারের শষ্য পাব না! চাল, সবজি, প্রত্যেকদিন মানুষ বাজারে গিয়ে যা কেনে তার সবই ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাবে। বৈজ্ঞানিকরা বলছেন, উষ্ণায়নে চাষযোগ্য ফসলের চাষ হওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়বে, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বেড়ে গেলে, যা-ও বা কোনও শষ্যের চাষ হল, সেই সমস্ত জমি জলের তলায় চলে যাবে! বৈজ্ঞানিকরা আরও জানিয়েছেন, ১০ হাজার বছর ধরে মানুষ যে প্রজনন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশেষ কিছু ফসল ও ফল খেয়ে আসছে, পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা জনিত কারণে হওয়া খরা, বন্যার জন্য সেই প্রজনন ব্যবস্থাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে! গবেষণার নেতৃত্বে যিনি ছিলেন সেই বেঞ্জামিন কিলান জানিয়েছেন, প্রাচীনকালের গৃহপালনের সময়ই জেনেটিক ডাইভারসিটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাও সেই সময়ের অভিজাত ফসলকে জেনেটিকালি ভবিষ্যতের জন্য রক্ষা করা যেত। কিন্তু আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সেই কাজও সঠিকভাবে করা যায়নি। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ২০৬০-এর মধ্যে পৃথিবী জুড়ে আলু, মিষ্টি আলুর চাষ বর্তমানের চেয়ে আরও ৩২ শতাংশ কমে যাবে। আবহাওয়া পরিবর্তনকে ঠেকানো না গেলে ২০৫০-এর মধ্যে পৃথিবী জুড়ে কফির মহা আকাল দেখা দেবে। বৈজ্ঞানিকরা বলছেন কফি চাষের মোট যা জমি আছে পৃথিবীতে তার অর্ধেক জলের চলে যেতে পারে!
বৈজ্ঞানিকরা এখন ভেবে চলেছেন, ফসল কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যেতে পারে। ভাবনার একটা প্রতিফলন, প্রাচীনকালে মানবসভ্যতা যে শষ্যের চাষ করত, যে ফসল সাধারণত খেয়ে বাঁচত সেই সমস্ত শষ্য আর ফসলকে ফিরিয়ে আনা! বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাতে ফিরতে পারে ‘জেনেটিক ডাইভারসিটি’। মিলেনিয়াম সিড ব্যাঙ্কে ৪০ হাজারেরও বেশি বীজ রাখা আছে। সবই বন্য উদ্ভিদের। কিন্তু সকলের জিন সেখানে রাখা নেই। অগত্যা ভরসা অভিজ্ঞ উদ্ভিদবিদদের ওপর। তাদের ওপর নির্ভর করছে ‘জেনেটিক ডাইভারসিটি’র ফেরা।