আতঙ্ক যখন সাপ

আতঙ্ক যখন সাপ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ মে, ২০২৪

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান অনুসারে প্রতি বছর ১.৮ মিলিয়ন থেকে ২.৭ মিলিয়ন মানুষ সাপের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়, যার ফলে ১৩৮,০০০ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়। শুধুমাত্র সাব-সাহারান আফ্রিকাতেই, প্রতি বছর সাপের কামড়ে প্রায় ২০,০০০ থেকে ৩২,০০০ লোক মারা যায়, যদিও গবেষকরা মনে করে মৃত্যুর এই সংখ্যা খুব মোটা দাগে ধরা হয়েছে।
আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর, সুন্দর অথচ বিপজ্জনক সাপের বাসস্থান হল আফ্রিকা। এখানে ছোটো বড়ো বিভিন্ন আকারের সাপ বসবাস করে। প্রতিটি সাপ ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে তাদের শিকারকে আক্রমণ করে। ছোটো ছোটো স্য-স্কেল্ড ভাইপারের বিষে রক্তপাত হয় যা প্রাণঘাতী। আবার কিছু বৃহদাকার পাফ অ্যাডার বা স্পিট্টিং কোবরার বিষ মাংসে পচনের সৃষ্টি করে। সবুজ এবং কালো মাম্বার বিষ শিকারের শ্বাসযন্ত্রের পেশিগুলোকে অবশ করে দ্রুত মৃত্যু ঘটাতে পারে।
সাপের কামড়ের চিকিত্সাকে কেন্দ্র করে বেশিরভাগ গবেষণা রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।ভাবতে আবাক লাগে যে সাপের কামড়ে বেঁচে থাকা প্রায় ৪০০,০০০ ব্যক্তি স্থায়ীরূপে আঘাতপ্রাপ্ত বা অক্ষম হয়ে গেছে। সাপের বিষে শরীরের কলার ক্ষতি কিছু নির্দিষ্ট টক্সিনের কারণে ঘটে যা ত্বক, পেশি এমনকি হাড়ও নষ্ট করে দেয়। এই সাইটোটক্সিন কোশকে নষ্ট করে ফেলে, ফলত ক্ষতি গুরুতর হতে পারে। প্রায়শই এই নষ্ট হয়ে যাওয়া মাংস বা আক্রান্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করতে হয়। গত কয়েক বছর ধরে, গবেষকরা স্থানীয় টিস্যু নেক্রোসিসের জন্য নতুন নতুন থেরাপির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। এই গবেষণায় তারা দেখেছেন এমন কিছু ওষুধ রয়েছে যা মূলত অন্যান্য রোগের জন্য তৈরি করা এবং যা ইতিমধ্যেই মানুষের ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলোতে নিরাপদ বলে নির্ধারণ করা হয়েছে সেই সব ওষুধ ব্যবহার করলে সাপের বিষে থাকা সাইটোটক্সিনকে দমন করা যায়। গবেষকরা আশাবাদী যে সাপের কামড়ের জায়গায় স্থানীয়ভাবে এই জাতীয় ওষুধের ব্যবহার ক্ষতিকারক পচন ধরার সম্ভাবনাকে রোধ করবে। তারা আরও দেখেছেন যে ওষুধগুলো বিভিন্ন প্রজাতির সাপের জন্য কার্যকর। মাথায় রাখতে হবে যে একটি ওষুধ বাজারে আনা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া যার জন্য বছরের পর বছর নিবেদিত গবেষণা এবং উল্লেখযোগ্য পুঁজি প্রয়োজন। তবে এটি প্রথম পদক্ষেপ, ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।