প্রাণীদের স্বাভাবিক অনুভবশক্তিতে স্থির তড়িৎ এক হাতিয়ার

প্রাণীদের স্বাভাবিক অনুভবশক্তিতে স্থির তড়িৎ এক হাতিয়ার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ মে, ২০২৪

পূর্ণাঙ্গ বোলতা মধু, ফুলের রেণু খেতে পছন্দ করলেও, তারা ছোটো ছোটো পতঙ্গ, শুঁয়োপোকাকে মেরে টুকরো করে তা তাদের বাচ্চাদের খাওয়ায়। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায়, বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েছেন যে শুঁয়োপোকার রোম স্থির তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রতিক্রিয়ায় নড়াচড়া করে, যা তাদের শিকারী বোলতার থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। এই নড়াচড়া অন্যান্য পোকামাকড়ের ডানার নড়াচড়ার তরঙ্গের সাথে বেশ সংবেদনশীল। শিকারী-শিকারের মিথোষ্ক্রিয়ায় সংবেদনশীলতার সংকেত হিসাবে স্থির তড়িৎ ব্যবহার করার এটা প্রথম উদাহরণ। ইংল্যান্ডের ডক্টর স্যাম ব্যাখ্যা করেছেন, প্রাকৃতিকভাবে অনেক প্রাণী তাদের দেহে স্থির বিদ্যুৎ জমা করে রাখে, যা অন্যান্য বস্তুকে আকর্ষণ করে টানতে পারে বা ছিটকে দিতে পারে। বিশেষত পোকামাকড়ের দেহের রোম স্থির বিদ্যুৎ রয়েছে এমন পরিবেশে বিদ্যুতের চার্জের সাথে নড়াচড়া করে। ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টলের গবেষকরা জানতে চেয়েছেন শুঁয়োপোকার মতো প্রাণী অন্য শিকারী পোকা থেকে আসা বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র থেকে তার শিকারীদের গতিবিধি অনুভব করে শিকারীর গতিবিধি শনাক্ত করতে সক্ষম কিনা।
গবেষকরা স্ট্যাটিক চার্জ সেন্সরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বোলতা এবং শুঁয়োপোকার কতটা স্ট্যাটিক চার্জ বহন করে তা পরিমাপ করেছেন। তারপরে কম্পিউটেশনাল মডেলে চার্জের মানগুলো ইনপুট করে গাণিতিকভাবে বলেছেন যখন গাছে শুঁয়োপোকার কাছাকাছি বোলতা আসে তখন বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র কতটা শক্তিশালী হবে। শুঁয়োপোকার রোম বোলতার বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন তরঙ্গে কতটা প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া জানায়, তা মাপতে গিয়ে তারা দেখেছেন, পাওয়ারলাইন, ইলেকট্রিক ক্ষেত্রেও শুঁয়োপোকারা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। অর্থাৎ মানুষের তৈরি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র পোকাদের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপে বাধার সৃষ্টি করছে। শিকারী-শিকারের মিথোষ্ক্রিয়া প্রাণীদের বিবর্তনের অন্যতম প্রধান চালক। ভূমিতে বসবাসকারী প্রায় সমস্ত প্রাণীই স্থির তড়িৎ জমা করে বলে অনুমান করা হচ্ছে যার অর্থ এই স্থির তড়িৎ প্রাণীদের অপর প্রাণীকে অনুভব করার শক্তিতে একটা বড়ো ভূমিকা নেয়। তাছাড়া বিবর্তনের সময় কীভাবে কেন তারা বিবর্তিত হয়েছে তা এই মিথোষ্ক্রিয়া থেকে বোঝা যেতে পারে। গবেষকদের ব্যাখামতে তাদের অধ্যয়ন দেখায় যে স্থলজ প্রাণীদের শিকারী শনাক্তকরণ সংকেত হিসেবে স্থির তড়িৎ ব্যবহার করা সম্ভব। এই ক্ষমতা ব্যাপকভাবে, পোকামাকড় এবং অন্যান্য ছোটো প্রাণী যেমন মাকড়সা এবং বিছের মধ্যে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এই খাদ্য খাদকের প্রাকৃতিক স্বাভাবিক সম্পর্ক মানুষের কাজের জন্য বিঘ্নিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × five =