বৃহৎ মস্তিষ্কের জন্য মানুষ আর নন-প্রাইমেটরা বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর চেয়ে চটপটে, সহজে সমস্যা সমাধান করে। কিন্তু কেন কিছু প্রজাতির বড়ো মস্তিষ্ক বিকাশ লাভ করে? বলা হয়ে থাকে এর পেছনে একটা চক্র কাজ করে – বুদ্ধিমান প্রাণীরা তাদের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে দক্ষতার সাথে খাদ্য খুঁজে পায়, যাতে তাদের ক্যালোরি বৃদ্ধি পায়, আর সেই খাদ্য তাদের বৃহৎ মস্তিষ্ককে শক্তি জোগায়। এই ধারণার সমর্থনে গবেষণায় মস্তিষ্কের আকার ও খাদ্যের মধ্যে একটা সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছিল প্রাণীর খাদ্যে ফলের পরিমাণের সঙ্গে মস্তিষ্কের বিকাশের সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
উচ্চ শক্তির অধিকারী ফল, কিন্তু নানা ফল আলাদা আলাদা সময়ে পাকে, তা পাওয়াও যায় পৃথক জায়গায়। এই ফল আলাদা স্থানে বছরের বিভিন্ন সময়ে খুঁজতে প্রাণীর মস্তিষ্ককে কাজে লাগাতে হয়। যাদের মস্তিষ্কের আকার বড়ো তারা খাবার সহজে খুঁজে পায়। ই হাইপোথিসিসের ভিত্তিতে প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি-তে মস্তিষ্কের বিকাশের ওপর এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
পানামাতে বছরের এমন সময়ে এই গবেষণা করা হয়েছিল, যখন মাত্র কিছু ধরনের গাছের ফল তিনমাস সময়ের জন্য পাকে। ফলে সমস্ত ফলাহারী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের এই ফল খোঁজার দিকে মন দিতে হয়। গবেষকরা প্রাণীদের ডিপ্টেরিক্স গাছের ফল খাওয়ার ওপর অধ্যয়ন করেছিলেন। এর জন্য তারা স্পাইডার মাঙ্কি এবং হোয়াইট ক্যাপুচিন নামে দুটো বড়ো মস্তিষ্কের প্রাইমেট আর দুটো ছোটো-মস্তিষ্কের র্যাকুন জাতীয় প্রাণী হোয়াইট নোসড কোটিস এবং কিঙ্কজাউস বেছে নিয়েছিলেন। বড়ো মস্তিষ্ক যদি বুদ্ধির বিকাশে কাজ করে তাহলে বানরদুটোর আগে ফল খুঁজে পাওয়ার কথা, কিন্তু দেখা গেল নন-প্রাইমেটরা এক্ষেত্রে বেশি দক্ষ।
তাহলে বড়ো মস্তিষ্কের কেন গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে? গবেষকদের অনুমান এর সাথে স্মৃতির সম্পর্ক থাকতে পারে। তারা মনে করছেন যে প্রজাতির এপিসোডিক মেমরি ভালো তারা আরও খাবার পাওয়ার জন্য ফলের গাছ বেশ তাড়াতাড়ি খুঁজতে সক্ষম হবে। এছাড়া বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিবেশ থেকে খাবার আহরণের জন্য হাতিয়ার ব্যবহারের সম্পর্ক দেখতে গিয়ে তারা দেখেছেন হোয়াইট ক্যাপুচিন একমাত্র হাতিয়ার ব্যবহার করতে পারে, আর তাদের দেহের তুলনায় মস্তিষ্কের আকার বেশ বড়ো। একটা সামাজিক গোষ্ঠীতে বসবাসের জটিলতা মানিয়ে চলার জন্য মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে এই অনুমানকে গবেষণা সমর্থন করে।