আগ্রাসী বহিরাগত প্রজাতিগুলো দীর্ঘকাল ধরে প্রকৃতি এবং মানুষের জন্য একটি বড়ো হুমকি হিসাবে স্বীকৃত। এই বৈশ্বিক সমস্যাটি মোকাবেলা করার জন্য এখন জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নেচার, ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন-এ প্রকাশিত এ বিষয়ে একটি সমালোচনামূলক মূল্যায়নে বলা হয়েছে যে আগ্রাসী বহিরাগত প্রজাতির গুরুতর এবং ক্রমবর্ধমান হুমকি দমন করা জরুরি এবং অর্জনযোগ্য। এ মূল্যায়নে ইউকে সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড হাইড্রোলজি এবং ইউনিভার্সিটি অফ এক্সেটারের প্রধান লেখক অধ্যাপক হেলেন রায় সহ ৪৭টি দেশের ১০১টি সংস্থার ৮৮ জন লেখক প্রতিনিধিত্ব করেছে। ইন্টারগভর্মেন্টাল সায়েন্স পলিসি প্ল্যাটফর্ম অন বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস-এর (আইপিবিইএস) বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি আরও উল্লেখ করে যে বর্তমানে আমরা আগ্রাসী বহিরাগত প্রজাতির যে ক্ষতিকারক প্রভাব দেখতে পাচ্ছি তাতে আমরা ভবিষ্যতের প্রভাবের গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন করে ফেলছি। এছাড়াও আমরা জানি জীববৈচিত্র্যের চালকদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোনো প্রভাবই বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে না। মনে করা হচ্ছে আগ্রাসী বহিরাগত প্রজাতির ক্ষতিকারক প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। প্রতি বছর, বিশ্বব্যাপী, আনুমানিক দুই শতাধিক নতুন বহিরাগত প্রজাতি মানুষের ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে এমন অঞ্চলে প্রবর্তিত হচ্ছে যেখানে আগে তাদের দেখা যায়নি। মানুষের ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে বর্তমানে নতুন প্রজাতির প্রবর্তন না হলেও, ইতিমধ্যে যে সমস্ত বহিরাগত প্রজাতি অঞ্চলগুলোতে উপস্থিত তারা স্বাভাবিকভাবেই তাদের ভৌগলিক পরিসরকে প্রসারিত করতে থাকবে এবং নতুন দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে, তাদের ক্ষতিকারক প্রভাব বিস্তার করবে।
গবেষকরা মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তন একটি প্রধান চালক হিসেবে কাজ করে যার ফলে পূর্বে বসবাসের অযোগ্য অঞ্চলে আগ্রাসী বহিরাগত প্রজাতিরা বাস করতে শুরু করছে ও তাদের বিস্তার সহজতর হচ্ছে। ঠিক যেমন, জলবায়ু উষ্ণায়নের ফলে জলজ এবং স্থলজ আগ্রাসী বহিরাগত প্রজাতি আর্কটিক এবং অ্যান্টার্কটিক মেরুঅঞ্চলে ছড়িয়ে পরতে সক্ষম হচ্ছে। অথবা, কিছু পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে, জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাসের অন্যান্য চালকের সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করছে। এর ফলে স্থানীয় প্রজাতির তুলনায় আগ্রাসী বহিরাগত প্রজাতি দ্বিগুণ দ্রুততার সাথে তাদের পরিসর প্রসারিত করতে সক্ষম হচ্ছে। গবেষণাপত্র অনুসারে সচেতনতা বাড়ানোর প্রচার, শিক্ষা এবং বিজ্ঞান সংক্রান্ত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে যুক্ত করা প্রয়োজন। আগ্রাসী বহিরাগত প্রজাতির দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য ডিজিটাল শনাক্তকরণ সরঞ্জাম ব্যবহার, কমিউনিটি সায়েন্স প্রোগ্রাম প্রভৃতি উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক যেমন, ইউরোপে এশিয়ান হর্নেট ওয়াচ অ্যাপের মাধ্যমে জনসাধারণ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সচেতন বা সতর্ক করেছে যাতে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে।