গ্রিনল্যান্ডের বরফে পাওয়া বিশালাকার ভাইরাস

গ্রিনল্যান্ডের বরফে পাওয়া বিশালাকার ভাইরাস

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ জুন, ২০২৪

কয়েক মাস যাবত অন্ধকার কাটিয়ে যখন সূর্য উত্তর মেরুতে পুনরায় উদিত হয়, সেখানে বসন্ত আসে, আর তার সাথে ধীরে ধীরে জীবন ফিরে আসে। মেরু ভাল্লুক শীতঘুম থেকে জেগে ওঠে, সমুদ্রচারী আর্কটিক টার্ন তাদের দীর্ঘ দক্ষিণযাত্রার শেষে ফিরে আসে আর মাস্ক অক্সেনও উত্তরে পাড়ি দেয়। বসন্তের সূর্য শুধুমাত্র এদেরই জাগায় না, বরফে সুপ্ত অবস্থায় থাকা শৈবাল বসন্তে প্রস্ফুটিত হতে শুরু করে কিন্তু বরফের বড়ো অংশ তাতে ঢেকে কালো হয়ে যায়। বরফ কালো হয়ে গেলে তার সূর্যের আলো প্রতিফলিত করার ক্ষমতা কমে যায়, আর তাপ আটকে থাকে, ফলে সহজেই বরফ গলে যেতে থাকে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বেড়ে চলে। গবেষকরা তুষার শৈবালের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার একটা উপায় খুঁজে পেয়েছেন, যা কাজে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদে তারা বরফের কিছু অংশের গলন আটকানোর কথা ভাবছেন।
আরহাস ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের পোস্টডক লরা পেরিনি এবং তার সহকর্মীরা শৈবালের পাশাপাশি বরফের ওপর বসবাসকারী বিশালাকার ভাইরাস খুঁজে পেয়েছেন। তাদের অনুমান এই ভাইরাসগুলো তুষার শেত্তলা খায়, তাই এদের প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণ ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার তুলনায় ১০০০ গুণ ছোটো, কিন্তু বরফে পাওয়া যাওয়া এই বিশালাকার ভাইরাস বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়ার থেকে বড়ো। এদের জিনোমও সাধারণ ভাইরাসের তুলনায় বড়ো হয়, ব্যাকটেরিওফাজের তুলনায় তা ১০-১২ গুণ বড়ো। বিশালাকার ভাইরাস ১৯৮১ সালে প্রথম সমুদ্রে আবিষ্কৃত হয়েছিল, যা সবুজ শৈবালকে সংক্রামিত করে, এরপর এদের স্থলভাগের মাটিতে এমনকি মানুষের মধ্যেও দেখা গেছে।
এই প্রথম বরফের মধ্যে শৈবালের রাজ্যে এই বিশালাকার ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গবেষকরা কালো বরফ, লালা তুষার আর গলিত গর্ত থেকে বিশালাকার ভাইরাসের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন। কয়েক বছর আগে পৃথিবীর এই অংশকে জীবনহীন বলে মনে করা হত। কিন্তু এখন জানা গেছে সেখানে ব্যাকটেরিয়া, ফিলামেন্টাস ছত্রাক এবং ইস্ট ছাড়াও, শৈবালখেকো প্রোটিস্ট, বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক যারা শৈবালের ওপর পরজীবী আর এই বিশালাকার ভাইরাস যা শৈবালকে সংক্রামিত করে তারা উপস্থিত থাকে। জৈবিকভাবে শৈবালের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব বিস্তার করা যায় গবেষকরা শেষ তিনটি গ্রুপ নিয়ে অধ্যয়ন করতে চান।