ইন্টারনেটের মায়াজালে আসক্ত কিশোর-কিশোরী

ইন্টারনেটের মায়াজালে আসক্ত কিশোর-কিশোরী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ জুন, ২০২৪

মোবাইল ও ইন্টারনেটে আসক্ত শিশু বা কিশোরকিশোরীদের এখন দেখা মেলে প্রায় প্রতিটি পরিবারে। আজকের অধিকাংশ কিশোর কিশোরীরা নিঃসঙ্গতার শিকার কারণ প্রায় প্রতিটি পরিবারই ছোটো। বাবা-মায়েরাও সারা দিন ব্যস্ত থাকেন। তাই অসীম নিঃসঙ্গতা গ্রাস করে তাদের জীবন। পরিত্রাণ পেতে তারা সঙ্গী হিসাবে বেছে নেয় মোবাইলকে। এক সময়ে শিশু-কিশোররা স্কুল থেকে ফিরে ছুটত খেলার মাঠে। বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠত খেলাধূলায় তাই তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন বা নিঃসঙ্গ বোধ করার সময় বা সুযোগ পেত না। কিন্তু আজ তাদের চোখ আটকে থাকে মোবাইলে, তারা ইন্টারনেটের জগতে ডুবে থাকে। এক নতুন গবেষণা জানাচ্ছে ইন্টারনেট আসক্তির কারণে কিশোর-কিশোরীদের মস্তিক একধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় যা পরবর্তী ক্ষেত্রে তাদের অতিরিক্ত আসক্তিমূলক আচরণ এবং প্রবণতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। প্লস মেন্টাল হেলথ জার্নালে প্রকাশিত ফলাফল ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইন্টারনেটে আসক্ত ১০-১৯ বছর বয়সী ২৩৭ জনকে কেন্দ্র করে ১২টি নিবন্ধ পর্যালোচনা করেছে। ইন্টারনেটে আসক্ত এইসব কিশোর কিশোরী নিজেদের ইন্টারনেট ব্যবহারের তাগিদকে প্রতিহত করতে পারে না ফলত তাদের মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি তাদের সামাজিক, শিক্ষা এবং পেশাগত জীবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অধ্যয়নে ফাংশানাল ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং-এর মাধ্যমে দেখা হয়েছে বিশ্রাম নেওয়া এবং একটি কাজ সম্পূর্ণ করার সময় ইন্টারনেট আসক্ত অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চল কীভাবে একে অপরের সাথে সংযোগ বিস্তার করে। ইন্টারনেট আসক্তির প্রভাব কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্কে একাধিক নিউরাল নেটওয়ার্ক জুড়েই দেখা গেছে। মস্তিষ্কের যে অংশ বিশ্রাম নেওয়ার সময় সক্রিয় হয় ওঠে সেখানে একদিকে যেমন বর্ধিত কার্যকলাপ দেখা গেছে তেমনই কম সক্রিয়তাও দেখা গেছে। সক্রিয় চিন্তাভাবনার জন্য নির্দিষ্ট মস্তিষ্কের অংশগুলোতে কার্যকারী সংযোগে সামগ্রিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই পরিবর্তন কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আসক্তিমূলক আচরণ এবং প্রবণতা, সেইসাথে বৌদ্ধিক ক্ষমতা, শারীরিক সমন্বয়, মানসিক স্বাস্থ্য এবং বিকাশের সাথে সম্পর্কিত আচরণ পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গবেষকদের মতে বয়ঃসন্ধিকাল বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এই সময় তাদের শারীরিক, বৌদ্ধিক এবং তাদের ব্যক্তিত্বে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। ঠিক এই সময়ে ইন্টারনেট আসক্তির তাগিদ তাদের জন্য ক্ষতিকারক। তাদের আচরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং তাদের বিকাশকে প্রভাবিত করে। সম্পর্ক এবং সামাজিকতা বজায় রাখতে তাদের বেগ পেতে হয়, মিথ্যার আশ্রয় নেয়, তাদের খাওয়াদাওয়া অনিয়মিত হয়ে যায় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। সুতরাং এর প্রতিকার খুঁজতে হবে শীঘ্রই, নয়তো সামনে বড়ো বিপদ।