শিশুরা আজ আর বই পড়েনা, তারা গেম খেলে

শিশুরা আজ আর বই পড়েনা, তারা গেম খেলে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ জুন, ২০২৪

করোনার সময়ে মোবাইল, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপের ব্যবহার বেড়েছে সকলেরই। প্রতি দিন এই সব যন্ত্রে ব্যয় করা সময়কে প্রযুক্তির ভাষায় বলে ‘স্ক্রিন টাইম’। এই স্ক্রিন টাইমের পরিমাণ বেড়েছে অনেকটাই। তবে অল্পবয়সি এবং পড়ুয়াদের মধ্যে এর প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। দেখা গেছে, করোনাকালে শুধুমাত্র বিনোদনের কারণেই অল্পবয়সিরা মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের পর্দায় বেশি মাত্রায় সময় অতিবাহিত করেছে তা নয় লেখা পড়ার ক্ষেত্রেও এই সব যন্ত্রের সাহায্য নিতে হয়েছে সব বাচ্চাদের। তাতে উদ্বেগের পরিমাণ বাড়ছে। মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দেখেছেন যে কোভিড মহামারীকালে দীর্ঘ সময়ের জন্য লকডাউন শিশুদের বইয়ের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়েছে, হ্রাস পেয়েছে শিশুদের বই কেনার মাত্রা উল্টে কোভিড পরবর্তী সময়ে শিশুরা পড়ার বা গল্পের বই দূরে সরিয়ে রেখে হাতে তুলে নিয়েছে ট্যাবলেট বা মোবাইল ফোন। কমিউনিকেশন রিসার্চ অ্যান্ড প্র্যাকটিস-এ প্রকাশিত গবেষণায় দুটি অনলাইন সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমটি করা হয়েছিল ২০২১ সালে শেষের দিকে আর দ্বিতীয়টি ২০২২-এর নভেম্বরে। উভয় সমীক্ষায়, ৭ বছরের কম বয়সী শিশুদের অভিভাবকদের প্রশ্ন করা হয়েছিল। সমীক্ষায় দেখা গেছে ৬৬.৫% শিশুরা বই কিনলেও ২০২১ সালে ৫৯.১% শিশুদের ট্যাবলেট ছিল যা ২০২২ সালের সমীক্ষায় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭.১%। গবেষকদের মতে শিশুদের সামগ্রিকভাবে পড়ার অভ্যাস হ্রাস পেয়েছে কারণ অনলাইনে ই-রিডারের সংখ্যাও ১৩% থেকে ৫%-এ নেমে এসেছিল। শিশুরা অনেক বেশি করে ডিজিটাল ডিভাইসে আকৃষ্ট হলেও পড়ার বদলে বৃদ্ধি পেয়েছে ইউটিউব দেখা এবং গেমিং। তাছাড়াও ৫০% অভিভাবকদের মতে তাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে খোলা আকাশের নীচে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার চেয়ে ঘরে মোবাইল বা ল্যাপটপে গেম খেলা বেশি পছন্দ করে। এই সব খুদেদের মানিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই অভ্যাসের কারণে। গবেষণা অনুযায়ী, স্ক্রিন টাইমের সঙ্গে স্মৃতিশক্তি লোপের সরাসরি সম্পর্ক না হলেও পরোক্ষ ভাবে এর প্রভাব পড়ে শিশুমনের উপর। একটু বড়ো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অত্যধিক মোবাইল-আসক্তির কারণে অনিদ্রা, চোখের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কায়িক পরিশ্রমহীন অলস জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে অল্প বয়সেই স্থূলত্বের মতো সমস্যা গ্রাস করছে তাদের। ডিজিটাল ডিভাইসে মুখ গুঁজে বসে থাকার অভ্যাস খুদেদের মনোযোগের উপরেও থাবা বসাচ্ছে।
এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে এগিয়ে আসতে হবে বাবামায়েদের। বাচ্চাকে বই পড়াতে চাইলে আগে স্ক্রিনটাইম বেঁধে দিতে হবে। বাচ্চাদের অভ্যাস তাদের কাছের মানুষদের নকল করেই তৈরি হয়। তাই আগে বাবামাকে নিয়মিত পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। তবেই বাচ্চার মধ্যে সেটা বুনে দেওয়া সহজ হবে। বাচ্চাকে বই কিনে দিতে হবে অথবা পাড়ার লাইব্রেরিতে নিয়ে যেতে হবে। তবে, বাচ্চার হাতে শুধুই বই ধরিয়ে দিলেই চলবে না, গোড়ার দিকে, অভিভাবকদের ওর সঙ্গে পড়তে হবে। রিডিং পড়া নয়, অভিনয় করে গল্পগুলো শোনাতে হবে। গলার আওয়াজ বাড়িয়ে কমিয়ে, চোখ-মুখের নানা ভঙ্গিতে গল্পের চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। তবেই তো গল্প শোনার, আর পরে নিজে পড়ার মধ্যে যে মজাটা থাকে, সেটার স্বাদ নিতে শিখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 + nineteen =