শহরে আর আসবে না রাতে ভ্রমণ করা পরিযায়ী পাখিরা! এখনও আসছে, তবে দ্রুত কমে যাচ্ছে ওদের আসা। অন্যতম কারণ শহরগুলোয় কৃত্রিম আলোর ঝলকানি! নানারকমের আধুনিক ও শক্তিশালী আলোয় উজ্জ্বল হওয়া পৃথিবীর বিভিন্ন শহরের ঔজ্বল্য দেখে মানুষের খুব গর্ব! লাস ভেগাস থেকে লন্ডন, শিকাগো থেকে সাংহাই-আমাদের মুখে বাক্যটা চলে আসে, ‘দেখেছ! কী ঝকঝক করছে শহরটা!’
কিন্তু এই আপাত ঔজ্বল্যই রাতের পরিযায়ী পাখিদের আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে দিনের পর দিন। শহরের কৃত্রিম আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায় তাদের। গবেষণা বলছে রাতে কোনও শহরে প্রবেশ করা প্রচুর পরিযায়ী পাখি বড় বড় বাড়ির গায়ে ধাক্কা খেয়ে মারা গিয়েছে। প্রচুর শব্দের একটা পরিসংখ্যানও দিয়েছেন এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করা শিকাগো শহরের এক বিজ্ঞানীর দল। জানিয়েছেন, শুধু শিকাগো শহরেই ১৯৭৮-এর পর থেকে এখনও পর্যন্ত বাড়ির গায়ে ধাক্কা লেগে মৃত পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি! উল্লেখ্য যে, আমেরিকার শিকাগোতেই সবচেয়ে বেশি আলোর দূষণ! আর আমেরিকার হিসেব করতে পারেননি গবেষকরা। জানিয়েছেন প্রত্যেক বছর কয়েক লক্ষ রাতের পরিযায়ী পাখি মারা যায় দেশের বিভিন্ন আধুনিক এবং ‘উজ্জ্বল’ শহরগুলোর হাই-রাইজে ধাক্কা খেয়ে। পক্ষীকূল বহু ক্ষেত্রে হাই-রাইজের জানলাতেও ধাক্কা খেয়ে মারা গিয়েছে। কিন্তু গবেষণা বলছে, পাখিগুলো শহরে প্রবেশ করার পর যেখানে দেখছে ঘরটি অন্ধকার, সেই ঘঅরের জানলার সঙ্গে তাদের ধাক্কা লাগছে না! কিন্তু আলোকিত ঘরের জানলার সঙ্গেই তাদের ধাক্কা লেগে তাদের প্রয়াণ ঘটছে। গবেষকরা বলছেন, শরৎ এবং বসন্তকালে অন্য সময়ের চেয়ে ধাক্কা লাগার হার অন্তত ১১ শতাংশ বেশি! তাছাড়া, যদিও বা কোনও পরিযায়ী পাখি বেঁচে গেল, কৃত্রিম আলোর ঝলকানিতে তাদের পক্ষে বাসা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।
আমেরিকা একা নয়, ভারতেও এই ছবিটা একইরকম হতাশাজনক। গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, এই দেশেও প্রায় প্রতিটি শহরে আলোর দুষণ তীব্র! সেই নিয়ে কোনও প্রশাসকের যে হেলদোল আছে তাও দেখা যায় না। প্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা কিছু সংস্থার ‘নির্জীব’ আন্দোলনেও সরকারের যে নজর কাড়ার মত টনক নড়ে তাও নয়! তাই তার প্রতিফলনও স্বাভাবিক। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কমন ক্রেন, বার-হেডেড হাঁস, বিরল প্রজাতির বাজপাখি, নর্দান হুইটিয়ারের মত পরিযায়ী পাখিরা আর ভারতের ওপর দিয়ে যায় না!
নিজের ভাল পাখিও বোঝে!