আরব দেশে গাছপালা বৃদ্ধিতে ইউরোপ আফ্রিকা জুড়ে অসংখ্য প্রজাপতি ছড়িয়ে পড়ে

আরব দেশে গাছপালা বৃদ্ধিতে ইউরোপ আফ্রিকা জুড়ে অসংখ্য প্রজাপতি ছড়িয়ে পড়ে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ জুন, ২০২৪

২০১৯ সালের অনেকটা সময়, ইউরোপ পরিযায়ী প্রজাপতিতে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ ভ্যানেসা কার্ডুই প্রজাতির প্রজাপতি এক অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য তৈরি করেছিল যা অনেকের স্মৃতিতে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। একদল আন্তর্জাতিক গবেষক প্রজাপতির জনসংখ্যার এই বিস্ফোরণের উত্স আর কীভাবে এই প্রজাপতিগুলি বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে তা উদ্ঘাটন করেছেন। স্প্যানিশ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল এবং বার্সেলোনার প্রাকৃতিক বিজ্ঞান মিউজিয়ামের যৌথ কেন্দ্র বোটানিক্যাল ইনস্টিটিউট অফ বার্সেলোনার (IBB, CSIC-CMCNB) গবেষকরা ২০১৯ সালে সাত মাস ধরে ১০টি দেশ জুড়ে শত শত প্রজাপতি দ্বারা বাহিত পরাগ শস্যের ডিএনএ বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের গবেষণা কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। মাস ডিএনএ সিকোয়েন্সিং কৌশল বা মেটাবারকোডিং ব্যবহার করে, গবেষকরা ৩৯৮টা বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির পরাগ সনাক্ত করেছেন, যার মধ্যে অনেকগুলো স্থানীয় নয়, দূরবর্তী অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই পরাগরেণু দেখে গবেষকরা প্রজাপতির উত্স এবং যাত্রাপথ চিহ্নিত করেছেন। এই উদ্ভিদগুলো মূলত মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় উদ্ভিদ, যাদের উপস্থিতি দেখে এই অঞ্চলে অভিবাসনের কারণ বোঝা গেছে। অসংখ্য নাগরিক পূর্ব ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্ব ইউরোপে অভিবাসনরত মেঘের মতো প্রজাপতির উড়ে যাওয়ার বর্ণনা দিয়েছিলেন, যার সঙ্গে প্রজাপতিদের অভিবাসনের এই আবিষ্কার মিলে গেছে।
প্রজাপতির এই জনসংখ্যা বিস্ফোরণের পেছনে কারণ জানতে গবেষকরা বিগত ২০ বছরের স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করেন। তারা দেখেন ২০১৯ সালে মধ্য প্রাচ্যে এত গাছপালা জন্মায় যে মরুভূমি সবুজে পরিণত হয়। আর প্রজাপতিরা এর সুযোগ নিয়ে বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে তাদের বংশবিস্তার করতে থাকে। এর মধ্যে ভ্যানেসা কার্ডুই প্রজাতি পরিযায়ী, যারা আফ্রিকা ও ইউরোপ জুড়ে ১৫০০০ কিমি ব্যাপী উড়ে যায়। বহুল সংখ্যক প্রজাপতি হওয়াতে ইউরোপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, রাশিয়া জুড়ে প্রজাপতিরা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রজাপতিদের ছড়িয়ে পড়া পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ কীটপতঙ্গ পরাগায়নকারী হিসাবে কাজ করে, মাটিতে জৈববস্তু স্থানান্তর করে, তারা অন্যান্য প্রজাতির খাদ্য, ফসল বা বনের ক্ষতিকারক পতঙ্গ, পরজীবী ছড়াতে পারে। সাধারণত এই ধরনের চলাচল অলক্ষে থেকে যায় এবং পদ্ধতিগতভাবে তাদের পর্যবেক্ষণের জন্য কোন প্রতিষ্ঠিত প্রোটোকল নেই। এই আবিষ্কারের ফলাফল সীমানা এবং বাস্তুতন্ত্রের আন্তঃসংযুক্ততা প্রদর্শন করে৷ এক জায়গায় পোকামাকড়ের জনসংখ্যার বিস্ফোরণ অন্যান্য অঞ্চলেও প্রভাব ফেলতে পারে, তা বোঝা যাচ্ছে। এর সাথে সাধারণ মানুষের ভূমিকাও গবেষণায় উঠে এসেছে।