বায়ুমণ্ডল মহাজাগতিক বিস্ফোরণের বিরুদ্ধে এক বর্ম

বায়ুমণ্ডল মহাজাগতিক বিস্ফোরণের বিরুদ্ধে এক বর্ম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ জুন, ২০২৪

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কোটি কোটি বছর ধরে জীবনের আশ্রয়স্থল, যার ফলে বিবর্তনের মাধ্যমে নানা জটিল জীবন তৈরি হয়েছে। বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর জীবমণ্ডলকে মারাত্মক আল্ট্রাভায়োলেট বিকিরণ থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সূর্যের শক্তিশালী আল্ট্রাভায়োলেট বিকিরণের ৯৯% আটকে দেয়। পৃথিবীর ম্যাগনেটোস্ফিয়ার আমাদের বাঁচতে সাহায্য করে। তবে সূর্য তুলনামূলকভাবে শান্ত। শক্তিশালী সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকে আমাদের রক্ষা করতে ওজোনস্তর এবং ম্যাগনেটোস্ফিয়ার কতটা কার্যকর? পৃথিবীর বয়স ৪.৫ বিলিয়ন বছর, তার জীবনকালের একটি ছোটো ভগ্নাংশ প্রতি মিলিয়ন বছরে, একটা বিশাল নক্ষত্র পৃথিবীর ১০০ পার্সেক (৩২৬ আলোকবর্ষ)- এর মধ্যে বিস্ফোরিত হয়। আমাদের সৌরজগত মহাকাশে একটি বিশাল বুদবুদ বা বাবলের ভিতরে বসে আছে যাকে লোকাল বাবল বলা হয়। এখানে বাবলের বাইরের স্থানের তুলনায় হাইড্রোজেনের ঘনত্ব অনেক কম। ১০ থেকে ২০ মিলিয়ন বছর আগে সুপারনোভা বিস্ফোরণের সিরিজের পর এই বাবল তৈরি হয়েছিল।
সুপারনোভা বিপজ্জনক, আর একটা গ্রহ এর যত কাছাকাছি থাকবে, প্রভাব তত মারাত্মক হবে। পৃথিবীতে সুপারনোভা বিস্ফোরণের প্রভাব সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের অনুমান ছিল, যে এর ফলে পৃথিবীতে জীবের ব্যাপক বিলুপ্তি বা অন্তত আংশিক বিলুপ্তি ঘটেছে। একটা সুপারনোভার গামা-রশ্মি বিস্ফোরিত হয়, মহাজাগতিক রশ্মি পৃথিবীর ওজোনকে ক্ষয় করে আয়নাইজিং ইউভি বিকিরণ গ্রহের পৃষ্ঠে আঘাত করে। এর প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে আরও অ্যারোসোল কণা তৈরি হতে পারে, মেঘের ঘনত্ব বাড়ে আর বিশ্বব্যাপী শীতলতা সৃষ্টি হতে পারে। ক্লাইমেট অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার রিসার্চ সেন্টার, সাইপ্রাস ইনস্টিটিউট, নিকোসিয়া, সাইপ্রাসে এই গবেষণা করা হয়েছে। কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টে প্রকাশিত এই গবেষণা নিবন্ধ সুপারনোভা বিস্ফোরণ এবং পৃথিবীতে তাদের প্রভাব পরীক্ষা করেছে। নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে পৃথিবীর ওজোন স্তর অনেক বেশি স্থিতিস্থাপক এবং ১০০ পার্সেকের মধ্যে সুপারনোভা বিস্ফোরণের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সুরক্ষা প্রদান করে। এর ফলে পৃথিবীর মেরুগুলোর ওপর সর্বাধিক ওজোন ক্ষয় অ্যান্টার্কটিকার ওপর বর্তমান দিনের নৃতাত্ত্বিক ওজোন ছিদ্রের চেয়ে কম, নৃতাত্ত্বিক কারণে মোটামুটি ৬০-৭০% এর ওজোনস্তর ক্ষতির সম্মুখীন।
এই গবেষণায় উচ্চতর আয়নাইজিং বিকিরণের সংস্পর্শে আসার ফলে মানুষ এবং প্রাণীদের সরাসরি স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকির কথা বিবেচনা করা হয়নি। পরিস্থিতিভেদে, ব্যক্তিরা সময়ের সাথে সাথে বিপজ্জনক মাত্রার বিকিরণের সংস্পর্শে আসতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে, আল্ট্রাভায়োলেট বিকিরণ ১০০-গুণ বৃদ্ধি পেলেও বায়ুমণ্ডলের সরাসরি ক্ষতি হবেনা। গ্লোবাল কুলিং-এর দিক দিয়ে দেখতে গেলে প্রশান্ত মহাসাগর ও অ্যান্টার্টিক মহাসাগরে এর প্রভাব পড়বে। এই প্রভাবে শিল্প যুগের আগে ও বর্তমান দূষণের জন্য যতটা তাপমাত্রার পার্থক্য হয়েছে ততটা হবে। আমরা যতটা পৃথিবীকে গরম করেছি, এই গ্লোবাল কুলিং ঠিক ততটাই পৃথিবীকে ঠাণ্ডা করবে। সামগ্রিকভাবে, তাদের বক্তব্য কাছাকাছি সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকে পৃথিবীতে জীবকূলের ব্যাপক বিলুপ্তির সম্ভাবনা নেই। আমাদের গ্রহের বায়ুমণ্ডল এবং ভূ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্র কার্যকরভাবে কাছাকাছি সুপারনোভা বিস্ফোরণের প্রভাব থেকে জীবমণ্ডলকে রক্ষা করেচলছে, যা গত কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীতে জীবনকে বিবর্তিত হতে দিয়েছে।