কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে ওজোন স্তরের ক্ষতি?

কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে ওজোন স্তরের ক্ষতি?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ জুন, ২০২৪

স্টারলিঙ্কের মতো কমিউনিকেশন কোম্পানিগুলো আগামী দশক বা আরও কিছু বেশি সময়ের মধ্যে পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথে কয়েক হাজার উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে। কৃত্রিম ক্রমবর্ধমান উপগ্রহের ঝাঁক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা প্রশ্ন উত্থাপন করেছে এই উপগ্রহ যখন নিচে নামতে শুরু করবে তখন কী হবে? এই উপগ্রহগুলি তাদের জীবনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এসে পুড়ে যাবে, আর তাদের পথ বরাবর, ক্ষুদ্র ধাতব কণার অংশ পড়ে থাকবে। আমেরিকান গবেষকদের একটা সমীক্ষা অনুসারে, এই স্যাটেলাইট বৃষ্টি প্রতি বছর বায়ুমণ্ডলে ৩৬০ টন ক্ষুদ্র অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড কণা ছড়িয়ে দিতে পারে। অ্যালুমিনিয়াম কণা ৫০ থেকে ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে ছড়াবে তারপর এটা স্ট্রাটোস্ফিয়ারে চলে যাবে, যেখানে পৃথিবীর প্রতিরক্ষামূলক ওজোন স্তর রয়েছে। অ্যালুমিনিয়াম কণা ছড়িয়ে পড়লে তার ফলাফল কী হতে পারে, তা সঠিকভাবে জানা যায়নি, তবে একটা সম্ভাব্য ফলাফল হতে পারে অ্যালুমিনিয়াম ক্ষুদ্র কণাগুলি ঠাণ্ডা, বরফের কুঁচি তৈরি করবে, যার পৃষ্ঠতল বেশি থাকবে ফলে প্রতিফলন বেশি হবে।
১৯৯১ সালে মাউন্ট পিনাটুবোর বিখ্যাত অগ্ন্যুৎপাত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ১৫ মিলিয়ন টনেরও বেশি সালফার ডাই অক্সাইড ইনজেক্ট করেছে, যা প্রায় তিন বছর ধরে পৃথিবীর পৃষ্ঠকে অর্ধেক ডিগ্রি সেলসিয়াসের একটু বেশি ঠান্ডা করেছে। এর থেকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে সালফেট এরোসল ছড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাস করার জন্য জিওইঞ্জিনিয়ারিং করার কথা বিজ্ঞানীরা নানা সময়ে ভেবেছেন। বিভিন্ন আগ্নেয়গিরি থেকে যখন অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে তাতে যত এরোসল তৈরি হয়েছে, তার তুলনায় এই কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে অনেক কম পরিমাণে এরোসল তৈরি হবে। তাই এটা বায়ুমণ্ডলে কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখন বলা যাচ্ছেনা। অথবা এই ছড়িয়ে পড়া অ্যালুমিনিয়াম কণা নাইট্রিক অ্যাসিড বা সালফিউরিক অ্যাসিডের সাথে মিলে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায় কিনা, বা ক্লোরিনকে মুক্ত করে ওজোন স্তরের ক্ষতি করে কিনা তা এখনই জানা যাচ্ছে না। কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০০০ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কারা হবে, তাই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা খুব দরকার বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।