সাম্প্রতিক কিছু দশকে বিশ্বের বড়ো হ্রদের প্রায় অর্ধেক তাদের স্থিতিস্থাপকতা হারিয়েছে, অর্থাৎ হ্রদের জলের গুণমান, বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতু হয়েছে, যেখান থেকে এই হ্রদ্গুলো আর নিজেদের বিশেষ পুনরুদ্ধার করতে পারবেনা। উত্তর আমেরিকার পূর্ব দিকে আর উত্তর ইউরোপের হ্রদগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তার জন্য ঘন জনসংখ্যা আর দূষণকে মূলত দায়ী করা হয়েছে। তবে ধনী অঞ্চলে অবস্থিত হ্রদ অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর যার পেছনে ব্যয়বহুল সংরক্ষণ প্রচেষ্টা থাকতে পারে।
গবেষকরা দেখেছেন মানুষ এবং জলবায়ু উভয়ই ধীরে ধীরে হ্রদের প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যকর অবস্থার ক্ষতি করতে পারে। উষ্ণ তাপমাত্রা বাষ্পীভবন বাড়াতে পারে, বৃষ্টিপাত হ্রাস হ্রদের জলস্তর কমিয়ে দিতে পারে এবং ক্রমাগত দূষণ হ্রদের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। যখন তাপপ্রবাহ, খরা বা বন্যার মতো আকস্মিক ব্যাঘাত ঘটে, তখন একটা “স্থিতিস্থাপক” হ্রদ নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে পারে; কিন্তু দুর্বল হ্রদ সেই ধাক্কা সামলে উঠে পারেনা। একটা হ্রদের স্থিতিস্থাপকতা মূল্যায়ন করতে এর গঠন এবং বাস্তুতন্ত্রের কার্যাবলী বিবেচনা করে বিজ্ঞানীরা বলতে পারেন, যে এই হ্রদ কীভাবে জলবায়ু- এবং মানব-প্ররোচিত পরিবর্তনগুলিতে প্রতিক্রিয়া জানাবে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী হ্রদের স্থিতিস্থাপকতার পরিবর্তনের প্রবণতা কী, বা তা কেন ঘটছে তা বিশেষ জানা ছিল না। এই নিয়ে জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্সে নতুন গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ঝাং এবং তার সহকর্মীরা বিশ্বের বড়ো ও গুরুত্বপূর্ণ ১০৪৯টা হ্রদের স্বাস্থ্য এবং স্থিতিস্থাপকতা মাপার জন্য ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তাদের পরিবর্তন খুঁজছেন৷ তারা পরিসংখ্যানগত পরীক্ষার মাধ্যমে ও একটা হ্রদের রঙের দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন দেখেছেন। যদি অন্তত দুটি পরিসংখ্যানগত পরীক্ষা সম্মত হয়, তবে গবেষকরা সেই হ্রদটার স্থিতিস্থাপকতা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে বলে চিহ্নিত করেছেন। গবেষকরা হ্রদের এলাকা, গভীরতা এবং স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত রঙের নিরিখে হ্রদের আশেপাশের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন বিশ্লেষণ করে এই গবেষণার ফল প্রকাশ করেছেন।
গবেষকরা ধরে নিয়েছিলেন মানুষের কার্য কলাপে হ্রদের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পাবে, কিন্তু তাদের অধ্যয়ন করা হ্রদের মধ্যে ৫০ শতাংশ হ্রদের স্থিতিস্থাপকতা কমে গিয়েছিল, যাদের মধ্যে অনেকেরই বাস্তুতন্ত্র খাদের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব ও তার থেকে সৃষ্টি হওয়া দূষক হ্রদের এই ক্ষতির জন্য দায়ী বলে তারা জানিয়েছেন। তিব্বত মালভূমি বা এরকম উচ্চতায় অবস্থিত হ্রদের জল বিশ্ব উষ্ণায়নে হিমবাহ গলনের জন্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অ্যালগ্যাল ব্লুমের জন্য জলের গুণগত মান খারাপ হয়ে যায়। যদিও এই গবেষণার ফল উদ্বেগজনক, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলে হ্রদকে তার স্থিতিস্থাপকতা ফিরে পেতে সাহায্য করা যেতে পারে। আশার বিষয় বেশ কিছু অঞ্চলে ভূমির সঠিক ব্যবহার, গাছপালা লাগানো, ইউট্রিফিকেশন অর্থাৎ জলে পুষ্টি জুগিয়ে তাতে গাছপালা বৃদ্ধি করিয়ে হ্রদের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়েছে।