হকিং-এর জীবনতরঙ্গ
- ৮ই জানুয়ারি, ১৯৪২গ্যালিলিও-র জীবনাবসানের ৩০০ বছর পর, ইংলন্ডের অক্সফোর্ডে স্টিফেন হকিং-এর জন্ম।
- ১৯৫৩-১৯৫৮উত্তর লন্ডনের সেন্ট অ্যাবান বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তি, গণিতের প্রতি প্রেম সেখানেই। কিন্তু ডাক্তারী পড়ুক ছেলে, বাবার বাসনা ছিল এমনই।
- ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় বিশেষীকরণ, প্রকৃতিবিজ্ঞানে প্রথমশ্রেণীতে স্নাতকলাভ।
- ১৯৬৩কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাকাশবিজ্ঞান ও সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে গবেষণার প্রারম্ভ। মাত্র ২১ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন হকিং, পরে জানা যায় সেটা অ্যামোট্রোফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস – শরীরের নড়াচড়া ও বাকসংক্রান্ত সমস্যাসৃষ্টিকারী, ক্রমবর্ধমান বিরল এক রোগ। এতদসত্ত্বেও তাঁর গবেষণা চলতেই থাকে।
- ১৯৬৫জেন উইল্ড-কে বিয়ে করেন হকিং, প্রথম বিবাহ তাঁর। এই দাম্পত্যে তিনজন সন্তান জন্মায়।
- ১৯৬৬ডক্টরেটের পড়াশুনো শেষ, কেমব্রিজের গনভ্যিল ও ক্যয়্যুস কলেজ থেকে ফেলোশিপ-প্রাপ্তি। সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের একমাত্রিকতা ব্ল্যাক-হোল গবেষণায় তিনি প্রয়োগ করেন। গণিতবিদ রজার পেনরোসের সাথে মিলিতভাবে কাজ শুরু হকিং-এর, পেনরোস তখন লন্ডনের বার্কব্যেক কলেজে কর্মাধীন।
- ১৯৭০অভূতপূর্ব চরিত্র খুঁজে পান হকিং – কোয়ান্টাম ও সাধারণ আপেক্ষিকতা-তত্ত্বের মিশেলে ব্ল্যাক-হোল কর্তৃক বিকিরণের প্রমাণ পেশ করেন।
- ১৯৭৩ফলিত গণিতবিদ্যা ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের বিভাগে যুক্ত হন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই একই বছর, নিজের পূর্ববর্তী ধারণার বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন যে, ব্ল্যাক-হোল শক্তি ও কণা মহাকাশে বিকিরণ করতে পারে এমনকি উচ্চশক্তিসম্পন্ন দ্যুতি বিচ্ছুরণে বিস্ফারিত হতে পারে।
- ১৯৭৪নেচার পত্রিকায় তাঁর আবিষ্কারের সংবাদটি প্রকাশিত হয়, নাম ছিল – ‘ব্ল্যাক-হোল এক্সপ্লোশান ?’ সর্বক্ষণের জন্য হুইলচেয়ারে থাকা, ওই বছরেই শুরু।
- ১৯৭৭কেমব্রিজে মহাকর্ষীয় পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসাবে যুক্ত হন হকিং।
- ১৯৭৯কেমব্রিজে গণিতবিভাগের লুকাসিয়ান অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন (এই পদে একসময়ে ছিলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন, ১৬৬৩ সালে)। রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন ওই বছরেই।
১৯৮২ব্রিটিশ মহারাণী কর্তৃক সি.বি.ই প্রদান। ( সি.বি.ই – কম্যান্ডার অফ দ্য মোস্ট এক্সেলেন্ট অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার )
- ১৯৮৫বাকশক্তি লোপ পায় তাঁর, এরপর থেকেই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কথা বলতে শুরু করেন তিনি।
- ১৯৮৮প্রকাশিত হয় ‘আ ব্রিফ হিষ্ট্রি অফ টাইমঃ ফ্রম দ্য বিগ ব্যাং টু ব্ল্যাক-হোলস্’, মহাকাশ সম্বন্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলির এক আদর্শ বুনিয়াদ। ঐতিহাসিক বেস্টসেলার হিসেবে ১৯৯৮ সালে ‘গিনেস বুক অফ রেকর্ডস্’-এ স্থান পায় বইটি।
- ১৯৯৩কিছু বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের সংকলনরূপে প্রকাশিত হয় ‘ব্ল্যাক-হোলস্ অ্যান্ড বেবি ইউনিভার্সেস, অ্যান্ড আদার এসেস্’, কীভাবে ব্রহ্মাণ্ড কার্যশীল, বইয়ের উপজীব্য এটাই।
- ১৯৯৫এলিন মেসনকে-কে বিয়ে করেন হকিং, এটি তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ।
- ১৯৯৮মানবজাতির অস্তিত্বের ভিত্তি এবং চারপাশের সমস্তকিছুকে সংযুক্ত করে, সেই নিরিখেই প্রকাশলাভ করে ‘স্টিফেন হকিং’স্ ইউনিভার্সঃ দ্য কসমস এক্সপ্লেইনড’।
- নভেম্বর, ২০০১পদার্থবিদ্যার তদানীন্তন কিছু অভূতপূর্ব আবিষ্কারের রহস্য উন্মোচন করতে, একমাত্র ইংলন্ডেই প্রকাশ পায় হকিং-রচিত ‘দ্য ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল’।
- সেপ্টেম্বর, ২০০২‘অন দ্য শোল্ডার্স্ অফ জায়ান্টস্’, ‘দ্য গ্রেট ওয়ার্কস্ অফ ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনমি’, ‘অ্যান এক্সপ্লোরেশন অফ সাম অফ দ্য গ্রেটেস্ট ভিশনারিস্ ইন দ্য হিষ্ট্রি অফ সায়েন্স ইনক্লুডিং কোপার্নিকাস, কেপলার, গ্যালেলিও, নিউটন অ্যান্ড আইনস্টাইন’ – উল্লিখিত বইগুলি সমস্তই এই সময়ে প্রকাশ পায়।
বর্তমান ও অতীতের পদার্থবিদ্যার সবচেয়ে জটিল তত্ত্বগুলির পরিবেশনে, হকিং-এর ‘দ্য থিওরি অফ এভ্রিথিংঃ দ্য অরিজিন অ্যান্ড ফেট অফ্ দ্য ইউনিভার্স’ প্রকাশিত হয়।
- জুলাই, ২০০৪ব্ল্যাকহোল প্যারাডক্স সমাধান করে ফেলেছেন – এমনই ঘোষণা করেন হকিং। এই ধাঁধা বহু বছর বিজ্ঞানীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। ডাবলিনে, ‘সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ ও মহাকর্ষ’ – শীর্ষক আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রে হকিং তাঁর নতুন অনুসন্ধানগুলি পেশ করেন।
সংকলন ঃ প্রত্যয় রায়
|
-
- অধ্যাপক স্টিফেন হকিং, স্ত্রী জেন এবং দুই সন্তান, রবার্ট ও লুসি’র সাথে
- রুমাল হাতে স্টিফেন হকিং অক্সফোর্ড বোট ক্লাবে
- আ ব্রিফ হিষ্ট্রি অফ টাইম প্রকাশের আগে, ১৯৮৮ নাগাদ, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টিফেন হকিং ও তাঁর সহকর্মীবৃন্দ
- স্টিফেন হকিং-এর উল্লেখযোগ্য মন্তব্য
- ব্রহ্মাণ্ড টিকে আছে কেন…“এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজতে গেলে, মানুষের যুক্তিবোধের পক্ষে সে হবে এক যুগান্তকারী অভিঘাত, কারণ তখনই আমরা জানতে পারব সত্যিই ‘ঈশ্বরের’ মনে কী ছিল।”
- আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম, ১৯৮৮-তে প্রকাশিত
- ব্ল্যাক-হোল সম্বন্ধে…“ঈশ্বর ঘুঁটি ছোঁড়েন নি – ভুল ছিল আইনস্টাইনের এই বক্তব্য। ব্ল্যাক-হোল আছে এটা ধরে নিলে, বলা চলে, ঈশ্বর স্বয়ং ঘুঁটি শুধু ছোঁড়েনই নি, বরং বহুক্ষেত্রেই ঘুঁটিগুলোকে অন্ধকারের মধ্যে এমনভাবে ছুঁড়ে দিয়েছেন, যাকে আর খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না।”
- দ্য নেচার অফ স্পেস অ্যান্ড টাইম
- মানবতা নিয়ে…“খুবই সাধারণ একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণরত তুচ্ছ একটি গ্রহে, বানরেরই সামান্য এক উন্নত প্রজাতি আমরা। কিন্তু আমরা মহাবিশ্বকে বুঝতে পারি, সেটাই আমাদের বিশেষত্ব।”
- সাক্ষাৎকার, দ্য স্পীগেল, অক্টোবর, ১৯৮৮
- জীবন সম্পর্কে…“প্রথমত, নিজের পায়ের দিকে নয়, আকাশের দিকেই যেন আমরা তাকাই। দ্বিতীয়ত, হাল ছেড়ো না – পরিশ্রমই তোমার জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারে, বিনাশ্রমের জীবন শূন্যের সামিল। তৃতীয়ত, যদি ভালোবাসার সন্ধান পাও, তাকে মনে রেখো, ফেলে দিও না।”
- এ.বি.সি –র ডিয়েন সওয়ারের নেওয়া সাক্ষাৎকার, জুন, ২০১০
- অক্ষমতা নিয়ে বেঁচে থাকা প্রসঙ্গে…শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষের কাছে আমার বিনম্র উপদেশ, আপনার অক্ষমতা যে গুণ বা কাজের ক্ষমতাকে বিকল করে দিতে পারেনি, তার উপরে মনোনিবেশ করুন। কখনো অক্ষমতা নিয়ে দুঃখ করবেন না। নিজের উদ্যম এবং শারীরিক ক্ষমতাকে পঙ্গু করে দেবেন না।”
- নিউইয়র্ক টাইমস-এর সাক্ষাৎকার, ২০১১-র মে’ মাস
- আনন্দে থাকা নিয়ে…“মজাদার যদি না’ই হত, তবে জীবন বিচ্ছেদময়”
- নিউইয়র্ক টাইমস-এর সাক্ষাৎকার, ডিসেম্বর ২০০৪
- স্বেচ্ছামৃত্যু প্রসঙ্গে…“আক্রান্ত মানুষের অবশ্যই নিজের জীবনে ইতি টানার অধিকার আছে। তবে, এটাকে বড়ো ভুল ব’লেই মনে হয় আমার। সহস্র প্রতিকূলতার মধ্যেও, জীবনে সবসময়েই কিছু না কিছু করার থাকে, পৌঁছানোর থাকে। জীবন যতক্ষণ, আলো’ও ততক্ষণ।”
- পিপল’স ডেইলি অনলাইন, জুন, ২০০৬
- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে…আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর উপর নির্ভরতা গোটা মানবজাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই প্রবণতা ঝড়ের গতিতে সমস্তকিছু দখল করে নিতে পারে, যার সাথে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা ধীরগতির বিবর্তনবাদী মানুষের কখনো নেই, হবেও না।”
- বি.বি.সি –র নেওয়া ইন্টারভিউ, ডিসেম্বর, ২০১৪
- মহাকাশে বসতির ব্যাপারে…“আগামী এক হাজার বছর মানুষজাতি অস্তিত্বরক্ষা করতে পারবে ব’লে বোধ হয় না। উপায় একমাত্র পৃথিবীর বাইরে বাসস্থান সন্ধান। একটিমাত্র গ্রহে হাজারো সমস্যায়, প্রাণের পতন অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু আশাবাদী আমি, তারাদের ছুঁয়ে আমরা ফেলবই।”
- দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর সাক্ষাৎকার, অক্টোবর, ২০০১
- তিনি যে মোটর নিউরোন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেই নিয়ে নিজের অভিমত…“মাত্র ২১ বছর বয়সেই, নিঃশেষ আমার প্রত্যাশা। তারপরে যা পেয়েছি, সবই উপরি-পাওনা।”
- নিউইয়র্ক টাইমস-য়ে প্রকাশিত সাক্ষাৎকার, ডিসেম্বর, ২০০৪
- মৃত্যু-বিষয়ক…“অকালমৃত্যুর বিধান সাথে নিয়ে, বিগত ৪৯ বছর আমি বেঁচে। মৃত্যু-সম্পর্কিত ভীতি আমার নেই’ই, উপরন্তু এ বিষয়ে নেই কোনো তাড়াও। কত কী করার আছে বাকি।”
- দ্য গার্ডিয়ান-এর সাক্ষাৎকার, মে’, ২০১১
|