দুর্ভিক্ষের প্রাণঘাতী ইতিহাস যথেষ্ট দীর্ঘ। কিন্তু আধুনিক যুগে দাঁড়িয়েও নতুন ক’রে আবির্ভূত হয়েছে অতীতের এক বিপদ- গমের মারণ রোগ। সারা পৃথিবীর প্রায় এক পঞ্চমাংশ খাদ্যের উৎস গম। তাই বলাই বাহুল্য যে, খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এ এক নতুন অশনি সংকেত। ক্রিসমাসের প্রাক্কালে যদিও খুশির খবরই দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত নতুন দুটি গবেষণাপত্রে বেরিয়ে এসেছে সমাধানের রুপোলী আলো।
বিশ্বের নানা স্থানে নতুন ক’রে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে – ফসল পুড়ছে ক্ষেতে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকতে না পেরে শস্য নষ্ট হয়েছে ব্যাপকভাবে। সবুজ বিপ্লবের সাফল্য অচিরেই মুখ ঢেকেছে ব্যর্থতার অন্ধকারে। সবুজ বিপ্লবের প্রধান কথাই ছিল প্রাকৃতিক উপায়ে প্রথম ক্ষতিকারক জিন চিহ্নিত করে উদ্ভিদদেহেই স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা গ’ড়ে তোলা।
নতুন যে উদ্ভাবনী গবেষণা গমের কান্ডের পচনের বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম – ঐতিহাসিকভাবেই তা সবচেয়ে মারাত্মক প্যাথোজেন। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রবার্ট পার্ক জানিয়েছেন, এই প্রথম ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা সম্ভব যে, গমের পচনের বিরুদ্ধে আদৌ পচন-প্রতিরোধী এসআর৫০ জিন কাজ করতে পারে কিনা। পচন প্রতিরোধে প্রয়োগ করা ছত্রাকনাশকের প্রভাবে গমগাছ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যাবে কিনা, তাও বোঝা সম্ভব।
পূর্ব আফ্রিকাতে গমগাছের এই রোগ প্রচুর ফসল নষ্ট করেছে এবং ইউরোপে হয়তো পুনরায় আক্রমণ হানতে চলেছে ।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র মিঃ জিয়াপেং ছেন এই গবেষণা প্রারম্ভ করেন। রূপ পরিবর্তনকারী ছত্রাকের প্রভাবে রোগনির্ণয় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল । জিয়াপেং পচনশীল অংশটি আলাদা ক’রে, জিনোমটি বিশ্লেষণ করেন। প্রফেসর পার্ক বলছেন, এটাও একটা যুদ্ধেরই মতো, প্যাথোজেনের থেকে এক কদম এগিয়ে থাকা তাই গবেষকদের মূল লক্ষ্য।
গমের কান্ডপচন রোগে ১৯৭৩ সালে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল দেশটি।
‘কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অরগনাইজেশন’-এর পক্ষ থেকে ডঃ পিটার ডোডস জানাচ্ছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রায় ৬০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে শস্যটির চাহিদা । এসআর৫০-এর প্রতিরোধকে প্রশমিত করতে সক্ষম কান্ডের পচনরোগ। অভিব্যক্তিগত পরিবর্তনের ফলে তা এখন রূপ নিয়েছে এভিআরএসআর৫০-তে।
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে বৃক্ষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ছত্রাকদেহের প্রোটিনকে চিনতে পারে, জানাচ্ছেন পিটার ডোডস।
ব্রিটিশ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের রোথামস্টেড গবেষণার অন্যতম মুখ্য বিজ্ঞানী ডঃ কস্ত্যা কান্যুকাও নিশ্চিত করছেন যে, ইউরোপে আসতে চলেছে গমগাছের মারণ রোগটি। যেমন সুইডেনে এই বছরেই তৈরি হয়েছে এই পরিস্থিতি। আমেরিকা ও এশিয়াতেও নতুন ক’রে প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে এই রোগ।
তিনি জানাচ্ছেন, পচনে দায়ী ইউজি৯৯ ছত্রাক প্রথম উগান্ডাতে ১৯৯৮ সালে, তারপর আফ্রিকা আর মধ্যপ্রাচ্যে আক্রমণ করে এবং ধীরে ধীরে তা বায়ুবাহিত হয়ে এশিয়াতে ফেলে অমঙ্গলের ছায়া।
প্রফেসর মেলানিয়া ফিউগেরয়া, প্রফেসর ব্রায়ান স্টিফেন্সন এবং ডঃ ইউ জিন এই গবেষণাটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
প্রফেসর পার্ক জানাচ্ছেন, ব্যবহারিক ভাবে এই এসআর৫০ পচন-প্রতিরোধী জিনটি ১০-১৫ বছরের দীর্ঘ পর্যায়ে লাভজনক হতে পারে।