বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা ছাড়াই পোশাকের ভেতরে অদৃশ্য ডেটা

বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা ছাড়াই পোশাকের ভেতরে অদৃশ্য ডেটা

Posted on ৯ এপ্রিল, ২০১৯

ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনে এক নতুন ধরণের স্মার্ট ফ্যাব্রিক তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। দাবী, এই সুতো দিয়ে বোনা জ্যাকেট নাকি অদৃশ্য পাসকোড রক্ষা করতে পারে, এবং সেই দিয়েই বাড়ির বা অফিসের দরজা খোলা যায়।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা ফ্যাব্রিক ও ফ্যাশান অ্যাকসেসারিজ তৈরি করেছেন যা কিনা তথ্য সঞ্চয় করে রাখতে সক্ষম। সিকিউরিটি কোড থেকে শুরু করে আইডেন্টিফিকশান ট্যাগ – কোনোরকম বৈদ্যুতিন যন্ত্র বা সেনসর ছাড়াই এটা কাজ করতে পারে।

ইউ আই এস টি ২০১৭ তে ২৫শে অক্টোবর প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা সুতোর মধ্যে থাকা অনাবিষ্কৃত চৌম্বক গুণাবলী খুঁজে পেয়েছেন। স্মার্টফোনের নেভিগেশন অ্যাপগুলির সাহায্যে এই তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব।

“যেহেতু এটা বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা ছাড়াই কাজ করে, তাই সেই পোশাক কাচা যায়, ইস্ত্রি করা যায়”, জানিয়েছেন প্রবীণ গবেষক শ্যাম গোলাকোটা। পল জি. আলেন স্কুল অফ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সহকারী অধ্যাপক তিনি। তিনি আরও জানাচ্ছেন, এই ফ্যাব্রিক নাকি ঠিক হার্ড ডিস্কের মতো কাজ করে, তথ্য সংগ্রহও চলে আবার প্রয়োজনে পরে নেওয়াও চলে।

সাধারণত যে ফ্যাব্রিক ব্যবহৃত হয়, তাতে বৈদ্যুতিক প্রবাহের সুযোগ থাকে । তবে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বুঝেছিলেন এই ফ্যাব্রিকের ভেতরেও চৌম্বক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, যা ব্যবহার করে ডিজিটাল তথ্য এমনকি অক্ষর বা সংখ্যার মতো দৃশ্যমান তথ্যও ফ্যাব্রিকের ভেতরে নিশ্চিন্তে রাখা যায়। খুবই স্বল্পমূল্যের চৌম্বকপরিমাপকের সাহায্যে এই তথ্য পড়া সম্ভব।
স্মার্টফোনে যে উপায়ে প্রায় কোনো শক্তি, কোনো খরচ ছাড়াই এইধরণের তথ্য পড়া যায়, সেই প্রযুক্তিই এখানে ব্যবহৃত হয়েছে – জানিয়েছেন অধ্যাপক গোলাকোটা।

টাই, বেল্ট, নেকলেস, রিস্টব্যান্ডের মতো জিনিসপত্তর আপাতত বানানো হয়েছে। এবং স্মার্টফোন সোয়াইপ করে সেই তথ্য ডিকোড করা সম্ভব।

প্রচলিত বুননযন্ত্রেই এই ফ্যাব্রিক বোনা হয়। কিন্তু চৌম্বক মেরুগুলি খুবই এলোমেলো হয়ে ছিল। ঐ ফ্যাব্রিকে একটি চুম্বক ঘষে বিজ্ঞানীরা সেই দিকভ্রষ্ট মেরুগুলিকে ঋণাত্মক বা ধনাত্মক দিকে সুসজ্জিত করেন। এতে করে বাইনারিতে কাজ করতে সক্ষম হয়ে ওঠে সেই ফ্যাব্রিক।

এই ম্যাগনেটিক সিগন্যালের প্রায় ৩০%-ই এক সপ্তাহের মধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়ে। যদিও, চৌম্বকত্ব বারংবার ফ্যাব্রিকে ফিরিয়ে আনা যায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, কাচা-শুকনো করা-ইস্ত্রিতেও ফ্যাব্রিকের তথ্য নষ্ট হয় না।

পকেটে রাখা স্মার্টফোনের সাথে সংযুক্ত করা যায় এই ফ্যাব্রিকের পোশাক – দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই উদ্দেশ্যে একটা দস্তানা তৈরি করা হয়েছে, যার আঙ্গুলের ডগায় পরিবাহী ফ্যাব্রিক থাকে। স্মার্টফোনে জেসচার নিয়ন্ত্রণও করা যায় এই দস্তানা পরে।

স্মার্টফোনে মোট ছটি জেসচার বোঝা গেছে- লেফট ফ্লিক, রাইট ফ্লিক, আপয়ার্ড সুইপ, ডাউনার্ড সুইপ, ক্লিক ও ব্যাক ক্লিক। প্রায় ৯০% ক্ষেত্রেই তা সঠিক ছিল।

ন্যাশানাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন, দা আলফ্রেড পি. স্লোয়ান ফাউন্ডেশন এবং গুগলের পৃষ্ঠপোষকতায় গবেষণাটি সম্পন্ন হয়।