শুধু চোখের ভাষাই নয়, কানও ধাঁধা খেলে আমাদের সাথে। অস্ট্রো-ইতালীয় যৌথ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মানুষের চেতনার জগতে সমস্তই আন্দোলিত অনুভূতি।
আমাদের সচেতন অভিজ্ঞতা অথচ সন্তত। কিন্তু, সিডনী ও ইতালিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, মানুষের বোধ এবং মনোযোগ- দুই’ই সহজাতভাবে ছন্দবদ্ধ প্রকৃতির।
মানুষের আচরণ বোঝার জন্য এটা গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। কীভাবে আমরা পরিবেশের সাথে আন্তর্সম্পর্ক গড়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি?
কারেন্ট বায়োলজি পত্রিকায় ইতিপূর্বেই প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বোধশক্তির চক্রাকার বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানের সারাংশ এইরকমঃ
সময়ের সাপেক্ষে শ্রবণক্ষমতা দোলায়মান এবং সর্বোচ্চ অনুভূতি এক কান থেকে অন্য কানে পর্যায়বৃত্ত হতে থাকে।
সিডনী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব ও চিকিৎসা বিভাগের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ডেভিড অ্যালেস, জোহান লিয়ুং ও টম হো; ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিদ্যার অধ্যাপক ডেভিড বার; পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্র্যান্সলেশানাল মেডিসিন বিভাগের তরফ থেকে অধ্যাপিকা মারিয়া কন্সেট্টা মোরোনি এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
খুব সহজ একটি পরীক্ষার সাহায্যেই তাঁরা দেখিয়ে দেন, মৃদু শব্দ বিচার করার যে সংবেদনশীলতা, তাও সময়ের সাথে সাথে অস্থির হলেও ছন্দানুবর্তী।
কয়েক বছর আগেই আমরা জেনেছি দৃশ্যবোধ চক্রাকারে কাজ করে। কিন্তু এই প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে দেখানো হল যে আমাদের শ্রবণক্ষমতাও ছন্দের নিয়মেই চলে।
মানুষের শ্রবণবোধের উত্থানপতন প্রমাণ করে, চেতনা মোটেই স্থির কোনো বিষয় নয়, বরং আমাদের বিশ্ববোধই চক্রীয় পদ্ধতিতে ক্রিয়াশীল।
‘কিছুদিন যাবত আমাদের ধারণা ছিল, অনুভূতি কোনো নিশ্চল ব্যাপার নয়, ঘূর্ণায়মান অথবা ছন্দবদ্ধ গতিশীলতা। গবেষণা সেই তত্ত্বকেই জোরালো করে মাত্র’ – বলছেন প্রোফেসর অ্যালেস।
শ্রবণবিষয়ক এই চক্রটি প্রতি সেকেন্ডে ছ’বার ঘটে। দ্রুত মনে হলেও, স্নায়ুবিদ্যায় মস্তিষ্কের দোলন সেকেন্ডে একশো’বার হওয়ারও নজির আছে।
প্রোফেসর অ্যালেস জানাচ্ছেন, মানুষও সেকেন্ডের এক-ষষ্ঠাংশে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে, শোনার ক্ষেত্রেও একই।
শোনার ব্যাপারে এই যে স্পন্দন, তা আমাদের অজ্ঞাতেই চলেছে, কিন্তু সূক্ষ্ম সময়ের বিচারে অবশ্যই ধরা পড়ে।
মস্তিষ্ক কেনই বা এই চক্রীয় প্রণালীতে তথ্য বিশ্লেষণ করে ? প্রচুর তত্ত্ব থাকলেও, ‘মনোযোগ দ্রুত স্ফুরণের মাধ্যমে স্নায়বিক ক্রিয়াশীলতাকে পরীক্ষা করতে থাকে’ – এই তত্ত্বই গ্রহণ করেছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।
বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে স্পর্শ নিয়েও এই একই ধরণের অনুসন্ধান করতে ইচ্ছুক।
‘মস্তিষ্ক স্বয়ং এক জটিল যন্ত্র – তাই তাকে বুঝতে শুরু করা বিজ্ঞানের জন্য ধর্মগ্রন্থ পাঠের সামিল। অথচ সর্বদাই মনে হয়, এখনও জানার কত বাকি’, ব’লে শেষ করেছেন প্রোফেসর অ্যালেস।
এক দশক আগেও ভাবা অসম্ভব ছিল মস্তিষ্কের এই কম্পমান দশা- যেন পুরনো দিনের নির্বাক চলচ্চিত্র।
কাঁপতে থাকা আলো অথবা তরঙ্গের নাচনের মতোই আমাদের ইন্দ্রিয়চেতনাও মৌলিকভাবে দোলায়মান।
কম্পনশীল মগজ যেভাবে কাজ করেঃ
দৃশ্যের সমস্ত অংশ সমান গুরুত্বের নয়। কিছু বস্তু অন্যদের চেয়ে অধিক মনোযোগ দাবী করে। এই ফলপ্রদ কৌশল কিছু বিশেষ আগ্রহের কেন্দ্রেই আমাদের বৌদ্ধিক ক্ষমতাকে চালিত ক’রে থাকে।
একইভাবে স্পন্দিত মনোযোগও অনুরূপ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। অভিন্ন স্বল্পঘনত্বে ছড়িয়ে না পড়ে, তাৎক্ষণিক একাগ্রতা তৈরি করে ।