সৌর বিকিরণ ও চৌম্বক ক্ষেত্র – এক ক্ষতিকারক জুটি

সৌর বিকিরণ ও চৌম্বক ক্ষেত্র – এক ক্ষতিকারক জুটি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ জুলাই, ২০২৪
সৌর বিকিরণ

এবছর মে মাসের শুরুতে সৌর ঝড়গুলো থেকে অসাধারণ অরোরার বিকিরণে আমরা মুগ্ধ হয়েছি, কিন্তু সূর্য অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক। সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে সরাসরি প্রোটনের বিস্ফোরণ মহাকাশে সার্চলাইটের মতো আছড়ে পড়ে। রেকর্ড থেকে দেখা যায় যে প্রায় প্রতি হাজার বছরে পৃথিবী এরকম সৌর কণার প্রোটন বিস্ফোরণের মুখোমুখি হয়, যা ওজোন স্তরের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে আর পৃথিবীর পৃষ্ঠে অতিবেগুনী (UV) বিকিরণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই সৌরকণার বিস্ফোরণের সঙ্গে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সম্পর্ক রয়েছে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র জীবনের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক সুরক্ষা বলয় প্রদান করে, যা সূর্য থেকে বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত বিকিরণকে প্রতিহত করে। সময়ের সাথে সাথে চৌম্বকক্ষেত্রের অনেক পরিবর্তন হয়। গত শতাব্দীতে দেখা গেছে, উত্তর চৌম্বক মেরু উত্তর কানাডা জুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে ঘুরেছে আর চৌম্বকক্ষেত্র ৬%-এরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড থেকে দেখা যায় কয়েক শতাব্দী বা সহস্রাব্দের মধ্যে এমন সময়ও এসেছে, যখন ভূ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্র খুব দুর্বল বা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল।
চৌম্বক ক্ষেত্র না থাকলে কী হয় তার প্রমাণ আমরা মঙ্গল গ্রহ থেকে পেতে পারি। এই লাল গ্রহ প্রাচীন অতীতে তার চৌম্বক ক্ষেত্র হারিয়েছিল যার ফলে তার বেশিরভাগ বায়ুমণ্ডল অনুপস্থিত। মে মাসে, অরোরার পরে পরেই, শক্তিশালী সৌর কণার ঝড় মঙ্গল গ্রহে আঘাত হানে। এতে মঙ্গল গ্রহে ওডিসি মহাকাশযানের ক্রিয়াকলাপ ব্যাহত হয়, আর দেখা যায় মঙ্গলের পৃষ্ঠের বিকিরণের মাত্রা বুকের এক্স-রে করার সময় যে বিকিরণ হয় তার চেয়ে প্রায় ৩০ গুণ বেশি। সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে বিক্ষিপ্তভাবে প্রোটন কণার বিস্ফোরণ হয়। প্রোটনগুলো ইলেকট্রনের চেয়ে অনেক বেশি ভারী এবং বেশি শক্তি বহন করে তাই তারা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের নীচের দিকে পৌঁছায়। এই অণুগুলি শুধুমাত্র এক্স-রে রশ্মি নির্গত করে, যা খালি চোখে দেখা যায়না।
এছাড়া এই প্রোটন কণা থেকে বায়ুমণ্ডলের ওপরদিকে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়, যার থেকে ওজোন স্তর ধ্বংস হয়ে যায়। ওজোন সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি শোষণ করে, যা চোখের দৃষ্টি, ডিএনএ-র ক্ষতি করে ত্বকের ক্যানসার ঘটাতে পারে, এছাড়া জলবায়ুতে এর প্রভাব পড়ে। বায়ুমণ্ডলীয় রসায়নের কম্পিউটার মডেলের সাহায্যে চরম সৌর কণার বিকিরণের ফল দেখা হয়েছে। দেখা গেছে এতে ওজোন স্তর এক বছরের মতো ক্ষতিগ্রস্থ হয়, অতিবেগুনী রশ্মির পরিমাণ বেড়ে যায়। কিন্তু পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র যখন দুর্বল থাকে, তখন ওজোন স্তরের ক্ষতি ছয় বছর অবধি বিরাজ করতে পারে। এতে অতিবেগুনী রশ্মির পরিমাণ ২৫% বেড়ে যায় আর ডিএনএ-র ক্ষতির মাত্রা ৫০% অবধি হতে পারে। সৌর ঝড়ের ফলে বিকিরণ ও চৌম্বক ক্ষেত্রের সম্পর্কে অতীত কাল থেকে নানা প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে যেমন নিয়েন্ডারথ্যাল, কিছু মারসুপিয়াল। আবার বিবর্তনের ফলে চোখ ও কঠিন খোলসওলা প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে।