মায়ের থেকেই অ্যালজাইমার্সের সূত্রপাত

মায়ের থেকেই অ্যালজাইমার্সের সূত্রপাত

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ জুলাই, ২০২৪
অ্যালজাইমার্স

অ্যালঝাইমার্স রোগ জীবন থেকে চুরি করে নেয় আমাদের স্মৃতি, আমাদের স্বাধীনতা, ছিন্ন করে দেয় আমাদের প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষমতা। ২০২০ সালে, বিশ্বব্যাপী ৫৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ছিল। ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ রূপ হল- অ্যালঝাইমার্স । ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ৬০-৭০% মানুষই অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত। বয়স বাড়লে স্মৃতি মাঝেমাঝেই বিশ্বাসঘাতকতা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কাজ কমে যায়। ফলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। বয়সজনিত কারণেই যে সব সময় ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়, তা নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় চেনা মুখ, নিজের জিনিস, সহজ কথা মনে রাখতে না পারার নেপথ্যে রয়েছে ‘অ্যালঝাইমার্স’।
ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতি ২০ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চিকিৎসকেরা মনে করেন বর্তমানে ডিমেনশিয়া আরও ভালোভাবে নির্ণয়, চিকিত্সা এবং এমনকি প্রতিরোধ করার উপায় সন্ধান করা আগের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি জামা নিউরোলজিতে প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে যে যাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাসের পারিবারিক ইতিহাস নেই অথবা যাদের বাবার স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ইতিহাস রয়েছে তাদের তুলনায় যাদের মায়ের স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার ইতিহাস রয়েছে তাদের যে কোনো বয়সে অ্যালঝাইমার্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। পিইটি স্ক্যান নামে একধরনের মস্তিষ্কের স্ক্যান করে জানা গেছে, যে অংশগ্রহণকারীদের মায়ের স্মৃতিশক্তি দুর্বলতার ইতিহাস ছিল তাদের মস্তিষ্কে বিটা-অ্যামাইলয়েডের মাত্রা বেশি ছিল। বিটা-অ্যামাইলয়েড জমা হওয়া অ্যালজাইমার্স রোগের একটি বিশিষ্ট সূচক বলে মনে করা হয়, কারণ স্মৃতিশক্তির সমস্যা শুরু হওয়ার কয়েক বছর আগে থেকেই মানুষের মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েডের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। যেসব অংশগ্রহণকারীর বাবার বয়স ৬৫ বছর হওয়ার আগেই তাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেয়েছিল সেই সব অংশগ্রহণকারীর মস্তিষ্কেও বিটা-অ্যামাইলয়েডের মাত্রা বেশি ছিল। তুলনামূলকভাবে, যে অংশগ্রহণকারীর বাবাদের ৬৫ বছরের পরে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় অথবা যাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাসের কোনো পারিবারিক ইতিহাস নেই তাদের মস্তিষ্কে বিটা-অ্যামাইলয়েডের মাত্রা স্বাভাবিক ছিল। এর কারণ অবশ্য বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারেনি। গবেষকদের অনুমান মাইটোকন্ড্রিয়ার ত্রুটিপূর্ণ কাজ এই রোগের জন্য দায়ী। মাইটোকন্ড্রিয়া আমাদের কোশের অভ্যন্তরে শক্তি সরবরাহকারী একটি কাঠামো। এগুলো কেবল আমরা আমাদের মায়ের দিক থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকি। মাইটোকন্ড্রিয়ায় তার নিজস্ব ডিএনএ রয়েছে আর এই ডিএনএ-র মধ্যে কোনো মিউটেশন থাকলে মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। আমাদের শরীরে উৎপন্ন শক্তির ২০% গ্রহণ করে মস্তিষ্ক। সুতরাং মাইটোকন্ড্রিয়ায় ত্রুটিপূর্ণ ক্রিয়াকলাপের কারণে বৌদ্ধিক ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে যা ধীরে ধীরে অ্যালজাইমার্সের দিকে নিয়ে যায়।