ফ্যাশান সূচনায় ছুঁচ

ফ্যাশান সূচনায় ছুঁচ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ জুলাই, ২০২৪

জলবায়ু নির্বিশেষে মানুষের শরীর ঢেকে রাখা একটা স্থায়ী সামাজিক অভ্যাস। সিডনি ইউনিভার্সিটির একজন প্রত্নতাত্ত্বিক ডঃ ইয়ান গিলিগানের নেতৃত্বে একদল গবেষক তাদের গবেষণাপত্রে পোশাকের বিবর্তন ও পোশাকের বিকাশ নিয়ে আলোকপাত করেছেন। তাদের বক্তব্য ছুঁচ হল একটা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্যে পোশাক সাজানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। সুরক্ষার জন্য পোশাক ব্যবহার থেকে তা পরিচয়ের অভিব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ, এই পরিবর্তনের সূচনা করেছে ছুঁচ। ডঃ গিলিগান জানিয়েছেন, প্রাগৈতিহাসিক যুগে সূঁচের ব্যবহার জামাকাপড়ের প্রয়োজনীয়তাকে সামাজিক কারণে পরিবর্তিত করেছিল। পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করে পশুর চামড়া দিয়ে মানুষ নিজেদের আচ্ছাদিত করত, যা তাপ নিরোধক হিসাবে কাজ করত। পরে ছুঁচোলো হাড় ও সূঁচ ব্যবহার শুরু হলে সুশোভিত পোশাক বানানো শুরু হয়। আমরা কেন পোশাক পরি? স্বাভাবিকভাবে আমরা ধরে নিই পোশাক মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ, কিন্তু বিভিন্ন সংস্কৃতির দিকে তাকালে, বোঝা যায় পোশাক ছাড়াই সমাজে মানুষ স্বচ্ছন্দে বাস করত, নিজেদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করত। ডাঃ গিলিগান বলেছেন, নির্দিষ্ট পরিবেশে শারীরিক প্রয়োজনীয়তা থেকে, সমস্ত পরিবেশে সামাজিক প্রয়োজনে পোশাকের রূপান্তর বেশ আকর্ষণীয় বিষয়।
ছুঁচোলো হাড়ের বদলে, পাথরের ছুঁচ ব্যবহার যখন শুরু হয়, তখন মানুষকে বেশ কায়দা করে সেই ছুঁচোলো হাড়ের মোটা প্রান্তের দিকে একটা গর্ত করতে হয়েছে, যেখান দিয়ে সুতো, তন্তু প্রবেশ করানো যাবে। এই ধরনের পাথরের ছুঁচের সবচেয়ে পুরোনো নির্দশন পাওয়া গেছে সাইবেরিয়াতে, আজ থেকে ৪০০০০ বছর আগে। প্রমাণ থেকে বোঝা যাচ্ছে, ছুঁচোলো হাড় দিয়ে ইতিমধ্যেই পোশাক তৈরি করা হত, কিন্তু ছুঁচের উদ্ভাবনে বাহারী, নানাস্তরবিশিষ্ট পোশাক উত্পাদন শুরু হয়েছিল, পোশাকের ওপর পুঁতি, অন্যান্য ছোট আলংকারিক আইটেম সংযুক্ত করে পোশাকের শোভা বৃদ্ধি করা হত। গবেষণায় দেখা গেছে শেষ বরফ যুগ অবধি প্রগৈতিহাসিক মানুষ কখনও পোশাক পরত আবার কখনও পরতনা। ডক্টর গিলিগান ও সহ-লেখকদের বক্তব্য পোশাকগুলো সাজসজ্জার অংশ হয়ে ওঠার কারণ শেষ বরফ যুগের শেষের দিকে, ইউরেশিয়ার ঠান্ডায় ঐতিহ্যগত দেহ সজ্জা পদ্ধতি, বডি পেন্টিং সম্ভব ছিল না। ঠান্ডায় বাঁচার জন্য মানুষকে সব সময় পোশাক পরতে হতো। এই কারণেই ছুঁচের উপস্থিতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা পোশাকের সাজসজ্জা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই পোশাক শুধুমাত্র সুরক্ষা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ব্যবহারিকভাবেই প্রয়োজনীয় নয়, ব্যক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়জ্ঞাপক হয়ে উঠেছে।