ভারত থেকে শ্রীলঙ্কা ব্যাপী দীর্ঘ এক সেতু

ভারত থেকে শ্রীলঙ্কা ব্যাপী দীর্ঘ এক সেতু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ জুলাই, ২০২৪
রাম-সেতু

ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো)-র বিজ্ঞানীরা অ্যাডামস ব্রিজ বা রামসেতুর তলদেশের সবচেয়ে বিশদ মানচিত্র তৈরি করেছেন। ভারতের ধানুশকোডি থেকে শ্রীলঙ্কার তালাইমান্নার পর্যন্ত নিমজ্জিত এই রিজটিকে একটি ধারাবাহিক গঠন হিসাবে নিশ্চিত করেছে। একটি মার্কিন উপগ্রহের সাহায্যে করা এই ম্যাপিং অনুশীলনের মাধ্যমে সমুদ্রের তল থেকে লেজারের রশ্মি প্রতিফলিত করে প্রমাণ করা হয়েছে যে চুনাপাথর দিয়ে তৈরি ২৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রামসেতুর ৯৯.৯৮% অগভীর জলে নিমজ্জিত। গবেষকরা সায়েন্টিফিক রিপোর্ট জার্নালে বলেছেন অ্যাডাম ব্রিজ বা রামসেতুর নিমজ্জিত অংশ সম্পর্কে জটিল বিবরণ প্রদানকারী এটিই প্রথম গবেষণা।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক মানচিত্রকার ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মাঝে ভারত মহাসাগরে নিমজ্জিত ওই ‘সেতুর আকারের ভূখণ্ড’ -টির নামকরণ করেছেন- অ্যাডামস ব্রিজ। এই ব্রিজটি রাম সেতু নামেও পরিচিত। মহাকাব্য রামায়ণে বর্ণনা করা হয়েছে রামের বানর সেনাবাহিনী রামের স্ত্রী সীতাকে লঙ্কার রাবণের হাত থেকে উদ্ধার করতে এই সেতু নির্মাণ করেন। ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে বর্তমানে নিমজ্জিত রিজটি ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি পূর্ববর্তী স্থল সংযোগ। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে পারস্য নাবিকরা সেতুটিকে- সেতু বান্ধাই বা সমুদ্রের উপর একটি সেতু হিসাবে বর্ণনা করেছিল। রামেশ্বরমের মন্দিরের তথ্য থেকে জানা যায় যে সেতুটি ১৪৮০ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে অবস্থিত ছিল, এবং পরবর্তীক্ষেত্রে একটি ঘূর্ণিঝড়ের সময় সেতুটি ধ্বংস হয়ে যায়। এর আগে উপগ্রহ-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণে সমুদ্রের তলদেশের কাঠামো প্রকাশ করলেও মূলত সেতুর উন্মুক্ত অংশগুলোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছিল। এই এলাকার সমুদ্র বেশ অগভীর, মাত্র ১ মিটার থেকে ১০ মিটার এর গভীরতা। ফলত এই সেতুর ম্যাপিং করা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। সুতরাং গবেষকরা জলের নীচে দেখার জন্য ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আইস ক্লাউড অ্যান্ড ল্যান্ড এলিভেশনের একটি লেজার-বাহিত অল্টিমিটার ব্যবহার করেছিলেন। তাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে প্রায় পুরো দৈর্ঘ্য বরাবর রিজটি সমুদ্রতল থেকে প্রায় ৮ মিটার উঁচু। কিন্তু আয়তনের মাত্র ০.০২ শতাংশ দৃশ্যমান, বাকি অংশ নিমজ্জিত। চুনাপাথর সামুদ্রিক জীবের জীবাশ্ম থেকে উদ্ভূত হয়। সামুদ্রিক জীবের খোলস এবং কঙ্কাল লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সমুদ্রের তলদেশে স্তরে স্তরে জমা হয়ে শক্ত পাথরে পরিণত হয়। গবেষণায় ১১টি সংকীর্ণ চ্যানেল দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের মান্নার উপসাগর এবং রিজের উত্তর-পূর্ব দিকে পাল্ক স্ট্রেইটের মধ্যে জল প্রবাহিত করতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই সংকীর্ণ চ্যানেলগুলো – বা রিজের অক্ষ বরাবর ফাঁকগুলো – সম্ভবত সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের হাত থেকে সেতুটিকে রক্ষা বা সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।